কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বহু মাঠের আমন ফসল দমকা হাওয়া আর ভারী বৃষ্টির কারণে মাটিতে হেলে পড়ে পানিতে মিশে পচে যাচ্ছে। যেখানে কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছিল ধান বিক্রির টাকায় সংসার পরিচালনা কিংবা বার্ষিক খোরাকী চালাবেন, সেখানে এখন খরচের টাকা উঠবে কিনা তা নিয়ে যেন দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।
কার্তিক মাস মানেই আমন ধানের ভরা মৌসুম। ভোলার মাঠে মাঠে বেড়ে উঠছে স্থানীয় আর উচ্চ ফলনশীল জাতের অন্তত ৪০ রকম ধান। রাজাশাইল, কাজলশাইল, ব্রি ৬২, ব্রি ৩২ আর বিনা-৭ সহ বেশ কয়েকটি জাতের ধান কাটার সময় শুরুর কথা আগামী ১০/১৫ দিন পরই। কিন্তু গেলো শুক্র ও শনিবারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ কেড়ে নিয়েছে বহু কৃষকের স্বপ্ন। যে ধান মাত্র কয়দিন পরই গিয়ে উঠত কৃষকের গোলায় তা এখন মাঠেই পচে যাচ্ছে ভারী বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় পানিতে হেলে পড়ে গিয়ে।
সদর উপজেলার ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, ইলিশা, কাচিয়া, ধনিয়া, আলীনগর সব খানে দেখা যাচ্ছে ধানগাছ পানিতে হেলে পড়ার দৃশ্য। শুধু সদর উপজেলাই নয় পুরো জেলার উপজেলায় আমন হারিয়ে বহু কৃষক এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার কৃষক রুস্তুম আলী জমাদ্দার জানান তিনি দু কানি জমিতে আমন চাষ করেছিলেন আশা ছিল ৮০ মন ধান পাবেন কিন্তু গত দু’দিনের দমকা বাতাস আর বর্ষায় ৯০ ভাগ ধান গাছ পরে গেছে তাই এখন ১০ মন ধান পাবেন কিনা সন্দেহ।
ভেদুরিয়ার মাঝির হাটের কৃষক মনির হোসেন জানান সে এক কানি জমিতে আমন চাষ করেছিলেন দু’দিনের বৃষ্টি আর বাতাসে সব ধান গাছ পরে গেছে এখন ফলনের আশা বাদ দিয়ে ঐ ধান গাছ কেটে এখন গরুকে খাওয়াচ্ছেন। একই এলাকার কৃষক এমরান হোসেন জানান তিনি এনজিও ব্র্যাক থেকে লোন নিয়ে এক কানি জমিতে ধান করেছিলেন এখন ধান গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন কিভাবে লেঅন পরিশোধ করবেন। ভেদুরিয়ার পাশ^বর্তী ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কৃষক আলাউদ্দিন,আবুল কাশেস ,সৈয়দ মাষ্টারসহ অনেক কৃষকের সাথে কথা বলে দেখা গেছে একই বক্তব্য।
ভোলা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে ভোলা জেলায় এক লাখ ৮৩ হাজার ছয় শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়। এতে ছয় লাখ ১৬ হাজার ৪০৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা কিন্তু গভীর নিম্নচাপের কারণে জেলায় ১৩ হাজার তিন শত ৪০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অন্তত ১০ কোটি টাকার মূল্যের চার হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন কম হবে। তবে কৃষকরা বলছেন এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক বাবু প্রশান্ত কুমার সাহা জানান ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ভোলার কৃষকরা আউস ধান চাষে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য কৃষি বিভাগ আগামী দুই এক দিনের মধ্যে কৃষকদের জন্য প্রণোদনা হিসাবে বীজ ও সার বিতরণ শুরু করবে। এরই মধ্যে গভীর নিম্নচাপের কারণে আবার ধাক্কা খেল ভোলার কৃষকরা। কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য পরবর্তী রবি কিংবা বোরো মৌসুমের উপর জোর দেয়ার পরামর্শ কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তার। তবে শুধু পরামর্শ নয়, আর্থিক অনুদান কিংবা সুদ মুক্ত ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে দাঁড়াবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভোলার কৃষকরা।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম