কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। বাংলাদেশের পরই ইলিশ উৎপাদনে যথাক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। এ ছাড়া ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি ১০টি দেশেই ইলিশ উৎপাদন কমেছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন প্রতিবছর ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশ শুধু বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মা-ইলিশ ও জাটকা সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ফলে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এখন বাংলাদেশের ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল অনেকাংশে অনুসরণ করছে। তিনি জানান, স্বাদে ও গন্ধে বাংলাদেশের অতুলনীয় ইলিশ উৎপাদন সাম্প্রতিক সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিএফআরআই বলছে, সুস্বাদু এ মাছটি একসময় দেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদীতে পাওয়া যেত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় নদীতে পলি পড়ে ইলিশের অভিপ্রয়াণ পথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, অবাধে জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনে এবং নদীদূষণসহ অন্যান্য কারণে ইলিশের উৎপাদন আশির দশকের গোড়ার দিকে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে থাকে। সেই থেকেই বছরের পর বছর নিরলস ও শ্রমলব্ধ গবেষণায় বিএফআরআইর বিজ্ঞানীরা জাটকার বিচরণক্ষেত্র, ইলিশের প্রজননক্ষেত্র ও প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করেন। পরে গবেষণার মাধ্যমে ইলিশ ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন করে বিএফআরআই।
গবেষণার ফলস্বরূপ বন্ধ হয় পাঁচটি অভয়াশ্রমে জাটকা এবং প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ আহরণ। আর এ কৌশলকে বাস্তবে রূপ দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইলিশ শুধু আমিষের চাহিদাই মেটায় না জানিয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণার ইলিশ বিশেষজ্ঞ আনিছুর রহমান বলেন, খাসি ও গরুর মাংসের চর্বি মানুষের শরীরে কলস্টেরল জমায়, রক্তের চাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অথচ ইলিশে ওমেগা-৩ নামের এক ধরনের তেল আছে, যা মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া রয়েছে এসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড, যা মানুষের শরীরে উৎপাদিত হয় না। আর কিছু খনিজ পদার্থ ও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে ইলিশে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার তথ্যমতে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।