কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ধানের খড়কে টুকরো টুকরো করে কাটার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ কর্তৃক ব্রি শক্তিচালিত খড় কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের দেশে গো-খাদ্য এবং মাশরুম চাষের উপযোগী বেড তৈরির জন্য ধানের খড়কে একটি নির্দিষ্ট আকারে টুকরো টুকরো করে কাটতে হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে হাতের সাহায্যে ধারালো দা অথবা ছুরি দ্বারা খড় কাটতে অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। এই মেশিনটি শক্তিচালিত চপার মেশিনে ধান, গম ও ভুট্টার খড় গবাদি পশুকে খাওয়ানোর উপযোগী করে ছোট ছোট টুকরা করা যায়। যন্ত্রটি দ্বারা ধানের শুকনো ও ভিজা বা কাঁচা খড় নির্দিষ্ট আকারে টুকরো টুকরো করে কাটা যায়। এ ছাড়াও সকল প্রকার ঘাস, ভুট্টা গাছ এবং আম, নিম, শজিনা ইত্যাদি গাছের কচি ডাল টুকরো টুকরো করে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়।
যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য:- যন্ত্রটি ৪ অশ্বশক্তি ডিজেল ইঞ্জিন অথবা ২ অশ্বশক্তি বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা চালানো যায়। যন্ত্রটি চালাতে দুজন শ্রমিকের প্রয়োজন। টুকরো করা খড়ের দৈর্ঘ্য সর্বনিম্ন ১.৫ সেন্টিমিটার, স্থানীয় কারখানায় স্থানীয় কাঁচামাল তৈরি ও মেরামত করা যায়। যন্ত্রটি স্থানীয়ভাবে সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল যেম:- অ্যাঙ্গেলবার, ফ্লাটবার, গিয়ার, ঢালাই লোহা ও কার্টিং বেস্নডের সমন্বয়ে তৈরি। যন্ত্রটি ফ্রেম, ফিডিং সিলিন্ডার, ড্রাইভার গিয়ার, কাটার বেস্নড, ইনপুট ও আউটপুট অংশ নিয়ে গঠিত। ড্রাইভার গিয়ারটির সঙ্গে সংযোজিত গিয়ারকে বেল্টপুলির মাধ্যমে ইঞ্জিন বা মোটরের দ্বারা চালানো হয়। খড় নির্গমন অংশটি এমন ভাবে তৈরি যাতে কর্তনকৃত দ্রব্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপাকারে জমা হয়।
যন্ত্রের কার্যপ্রণালিঃ– যন্ত্রটি চালানোর আগে বিভিন্ন ঘূর্ণায়মান অংশে মবিল বা গ্রিজ দিতে হবে। যন্ত্রটিকে অবশ্যই সমতল জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেন চালানোর সময় নড়াচড়া না করে। যন্ত্রটি চালু করার আগে বেল্ট ও পুলি, জ্বালানি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যন্ত্রে খড় দেয়ার আগে ইঞ্জিন ও মোটরটি চালিয়ে দেখতে হবে যেন যন্ত্রটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঘোরে। সতর্কতার সঙ্গে আস্ত খড় দিতে দিতে হবে এবং ফিডিং সিলিন্ডারের ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে খড় গুলো সামনের দিকে অগ্রসর হবে। সে ক্ষেত্রে ড্রাইভার গিয়ার ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত কাটার বেস্নড দ্বারা খড়গুলো নির্দিষ্ট টুকরো আকারে কাটতে থাকে। যন্ত্রটি তৈরির খরচ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
হস্তচালিত খড় কাটার যন্ত্রটি দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কেজি খড় কর্তন করা সম্ভব এবং অনেক সময় নিয়ে এটি চালনা করলে কৃষকের হাতে সমস্যা দেখা দেয় এবং শাড়ি-কাপড় পরা কোনো মহিলা এটি চালালে যে কোনো সময় কাপড় পেঁচিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যদিকে শক্তিচালিত খড় কাটার যন্ত্রটি দিয়ে ঘণ্টায় ১ টন খড় কর্তন করা যায়।
যন্ত্রটির উপকারিতাঃ- গবাদিপশুকে খড় কেটে খাওয়ালে খড় খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হজমে সহায়তাসহ পরিপাচ্যতা বৃদ্ধি পায়। এতে গবাদি পশুর চর্বণশক্তি কম লাগে, সঞ্চিত শক্তি অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদনে সহায়তা করে, খড়ের অপচয় কম হয় এবং উদ্বৃত্ত খড় গৃহস্থালি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়। গবাদি পশুকে খড় কেটে খাওয়ালে দানাদার খাদ্য অপেক্ষাকৃত কম লাগে। শস্য উপজাতগুলোর পুষ্টিমান বিশেষ করে ক্রড প্রোটিনের পরিমাণ গম এবং ভুট্টার খড়ে ধানের খড়ের তুলনায় অধিক। তাই ধানের খড়ের সঙ্গে গম ও ভুট্টার খড় গবাদি পশুকে খাওয়ালে দুধ ও মাংসের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। এসব শস্য উপজাতকে ব্যবহার করে শক্তিচালিত খড় কাটার যন্ত্র দিয়ে খড় কাটলে গবাদি পশুর খড়ের ঘাটতি পূরণ করা যায় এবং খামারিরা লাভবান হবে। শক্তিচালিত খড় কাটার যন্ত্রটি ব্যবহার করে সুবিধামতো যে কোনো আকারের খড় কাটা যায়।
যন্ত্রটির ব্যবহারে সতর্কতাঃ– যন্ত্রটি চালাতে গেলে নিম্নোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আঁটসাঁট জামাকাপড় পরে খড় কাটুন, ঢিলা জামাকাপড় ঘূর্ণায়মান যন্ত্রের সঙ্গে পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যন্ত্রের সামনে কাউকে দাঁড়াতে দেয়া যারে না। চালু অবস্থায় ঘূর্ণায়মান অংশে হাত দেয়া যাবেনা। যন্ত্রটি চালনার সময় মাস্ক ও চশমা ব্যবহার করা উচিত। ঘূর্ণায়মান অংশে খড় পেঁচিয়ে গেলে বা ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে ত্রুটিমুক্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। চালু অবস্থায় ঘূর্ণায়মান অংশে ভুলেও হাত দেবেন না। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জিনিসপত্র যেমন- ডেটল, তুলা, কাঁচি ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।
যন্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা গেল।
বিধান চন্দ্র নাথ ও সুব্রত পাল
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুর
কৃপ্র/ এম ইসলাম