কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাহাড়কাটা অব্যাহত থাকায় পলি সঞ্চালনের কারণে কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালীতে চর জেগে উঠেছে। ভূমিগ্রাসীদের থাবায় নদীর দু’পাশ সংকোচিত হয়ে পড়েছে, ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। কক্সবাজার-মহেশখালী পারাপারে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। । নৌ চলাচল নির্বিঘ্ন করতে দ্রুত ড্রেজিং ব্যবস্থা ও নদীর দুই তীর দখল রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
কক্সবাজার-মহেশখালী সরাসরি নৌপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বাঁকখালী নদী। কিন্তু সংশ্লি-ষ্ট কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিন ধরে বাঁকখালী নদীর ড্রেজিং না করার কারণে দিন দিন ভরাট হয়ে নদীর বেশির ভাগ তলদেশ চর জেগে উঠেছে। যার কারণে নৌ চলাচলরত নাবিকরা অনেক সময় রাত্রে নদীর মোহনা ও তীর নির্ণয় করতে পারছে না। ফলে ভাটার সময় যাত্রী নিয়ে নৌপথে চলাচলকারী বিভিন্ন কাঠের নৌকা ও স্পিড বোট নদী ভরাট হয়ে যাওয়া চোরাবালিতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গিয়েও দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে অনেক নৌযান। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়া-আসা ট্রলারগুলো চরে আটকে গিয়ে সময় মত কূলে ফিরতে না পারায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।
জানা যায়, প্রায় ২ শ’ বছর আগে ১৭৭৯ সালে মহেশখালী-কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর গড় গভীরতা যেখানে ১৫-৩৩ মিটার ছিল, ১৯৮৩ সালে তা ৯-২০ মিটারে কমে যায় এবং ১৯৯৯-২০০০এ তা আরো হ্রাস পেয়ে গড়ে মাত্র ৫-৮/১০ মিটারে পৌঁছে। বর্তমানে ভাটার সময় ঐ চ্যানেলে কোন নৌযানই চলাচল করতে না পেরে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
খুরুশকুল এর নুইন্না মাঝি, কুতুবদিয়া পাড়ার বাদশা মাঝি, কালু মাঝি, হালু মাঝি, হারুন মাঝিসহ অনেকে বলেন, “বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের যাওয়ার সময় ৬নং ঘাট থেকে শুরু করে নাজিরেরটেক পর্যন্ত নদীর গভিরতা যতেষ্ট কমে গেছে। ভাটার সময় কোন অবস্থাতে ট্রলার গুলো চলতে পারছে না। অনেক সময় তাদের বোটের নিচের তক্তা ফেটে বহু ট্রলার দুর্ঘটনার শিকারের পাশাপাশি নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্পীড বোট চালক মো: নাছির, জসিম উদ্দিন, রায়হান কবিরসহ অনেকে বলেন, প্রতি দিন তারা যাত্রীদের সার্ভিস দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভাটার সময় যাত্রীবাহী স্পীড বোট গুলো প্রতি নিয়ত বালিতে আটকে গিয়ে মাঝ পথে জোয়ারের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন যাত্রীদের চরম ভুগান্তি পুহাতে হচ্ছে অন্যদিকে তারা মময় মত ভাড়া মারতে না পেরে ব্যবসার চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মহেশখালি আধার ঘোনা এলাকার কলেজ ছাত্রী, মর্জিনা বেগম, রোকশানা আক্তার এই প্রতিবেদক কে জানান, কয়েক দিন আগে কলেজের কাছে জরুরী কক্সবাজার আসার পথে তাদের বহন করা স্পীড বোর্ডটি মাঝ পথে আটকে যায়। জোয়ারের জন্য অপক্ষা করায় প্রায় দেড় ঘন্টা পরে তারা ঘাট ধরতে পারে। এতে সময়মত কলেজে যেতে না পারায় তাদের দারুন ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। নদীতে অসংখ্য ডুবোচর তৈরি হওয়ায় স্পিডবোট ও ট্রলার উল্টে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
এব্যাপারে সচেতন মহলের অভিমত, বর্ষার সময় অব্যাহত পাহাড় কাটায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে বাঁকখালী নদী। আর এতে জেগে উঠছে চরাঞ্চল। এ চরাঞ্চল বর্ধিত খাসভূমি দখলে নিতে ভূমিগ্রাসীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। অব্যাহত পাহাড়কাটার ফলে পলি সঞ্চালনের কারণে বাঁকখালী নদী ভরাট হয়ে ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে আসছে। অচিরেই পাহাড় কাটা বন্ধ এবং ড্রেজিং না হলে নৌযান চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়বে।
পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার লম্বা এ নদীর সাড়ে আট কিলোমিটার খননের প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল একনেকে। কিন্তু মাত্র আট কিলোমিটার খনন পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের সভায় নদীর কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ড্রেজিংয়ের নতুন প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ব্যয়ে নদীর ২৮ কিলোমিটার খননের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি এখন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উত্থাপন করা হবে।
পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পাউবোর ২০৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরের জলাবদ্ধতাসহ নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব হবে।
কক্সবাজার-৩ (রামু-কক্সবাজার সদর) আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার বলেন, তিন যুগের বেশি সময় ধরে বাঁকখালী নদীর ড্রেজিং হচ্ছে না। এতে নৌচলাচল ঝুঁকিপূর্ণ প্রকট হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি অন্তত ২০ হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে।
সুত্রঃ coxsbazarnews / কৃপ্র/ এম ইসলাম