কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ অরবরই অযত্নে অবহেলায় বাড়ির আনাচে-কানাচে সহজেই জন্মে থাকে এবং ভালো ফলন দিয়ে থাকে। সরাসরি খাওয়া হলে এর গুণগতমান ভালো থাকে। মহিলা ও বাচ্চারা এর ফল খেতে খুবই ভালোবাসে। বাসাবাড়িতে বহুবিধ গুণসম্পন্ন এর ২/১টি গাছ লাগিয়ে এর ব্যবহার ও চাষাবাদ বাড়ানো যেতে পারে।
অরবরই এর উত্তম ঔষধি গুণ রয়েছে। এর রস লিভার টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর রস বমনকার ও রোচক হিসেবে সমাদৃত। এর পাতা গনোরিয়া রোগের উপশমকারী ও আরামদায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অরবরই কাঠ মোটামুটি শক্ত, কঠিন যা ছোটোখাট গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করা হয়। কোথাও এটির চাষ হয় না, কিন্তু দেশের সব এলাকাতেই কোনো কোনো বাড়িতে এর দু’একটা গাছ চোখে পড়ে । অনেক সময় বাজারেও এ ফল বিক্রি হয়। মাদাগাসকার দ্বীপে এর উৎপত্তিস্থান, অবশ্য কেউ কেউ আমাদের এ উপমহাদেশকেও এর উৎপত্তি স্থান বলে উল্লেখ করেছেন।
চাষাবাদ: সুনিষ্কাশিত হলে যে কোনো ধরনের মাটিতে এর চাষ করা চলে। তবে আর্দ্র মাটি অরবরই চাষের জন্য বেশি ভালো। বীজ দিয়েই সাধারণত অরবরই এর বংশবিস্তার করা হয়। কাণ্ডের শাখা কলম থেকেও নতুন গাছ জন্মানো যায়। অঙ্গজ বংশ বিস্তারের অন্যান্য পদ্ধতির ওপর তথ্যের জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং বিশেষ যতœ ছাড়াই এর চাষ করা যায়। আংশিক ছায়াতেও এটি ভালো জন্মে। বাগান আকারে চাষ করতে হলে ৫-৬ মিটার দূরত্বে চারা লাগানো যেতে পারে। প্রতি বছর শীতের শেষে প্রতি গাছে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর বা কম্পোস্ট এবং ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৩০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ফলধারণ ও ফলন:
অরবরই গাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যেই গাছ ফলদান করতে থাকে। শীতের শেষে গাছে ফুল আসে এবং মে-জুন মাসে ফল পাকে। কোনো কোনো গাছ প্রায় সারা বছরই কিছু কিছু ফল দান করে। অরবরই গাছেরও শাখা এবং কাণ্ড সর্বত্রই থোকা থোকা ফুল আসে ও ফল ধরে। মোটামুটি মাঝারি আকারের একটি গাছ থেকে ৪০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যেতে পারে।
পুষ্টি উপাদান ও ব্যবহার:
আমলকীর মতো অরবরই ফলের শাঁস পাকার পরও শক্ত থেকে যায়। বীজ বাদে মাংসল অংশ টক স্বাদ বিশিষ্ট যা টাটকা খাওয়া যায় বা লবণ ও অন্যান্য মসলা দিয়ে অমস্নত্ব কমিয়ে ভর্তা করেও খাওয়া যায়। এটি সবজি মিশ্রণ, সুগন্ধযুক্ত খাবার, চিনি সহযোগে সিরাপ, জুস, জেলি, চাটনি বা আচার তৈরি করে খাওয়া যায়। আধাপাকা ফল রৌদ্রে শুকিয়ে সুগন্ধযুক্ত শুঁটি বা সুস্বাদু আচার তৈরি করা যায়। কাঁচা অরবরই ফলের রস বাণিজ্যিকভাবে ভিনেগার তৈরিতে ও মিষ্টি সংরক্ষণ কাজের ব্যবহার করা হয়। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে এর কচি পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়।
কৃপ্র/ এম ইসলাম