কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় পাঁচটি গ্রামে সরকারিভাবে অ্যাকোয়া কালচার (বদ্ধ পানিতে চাষ) কুঁচিয়ার প্রদর্শনী খামার হাতে নিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। কুঁচিয়ার প্রদর্শনী খামার এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় এই কুঁচিয়া চাষের প্রতি অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় আদিবাসীদের ১০/১২ জনের কমিটি করে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়ন ও কঠোর তদারকিতে প্রদর্শনী খামার পরিচালিত হচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি প্রদর্শনীগুলো কমিটির সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন এবং উৎপাদিত কুঁচিয়া সদস্যরাই পাচ্ছেন। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কুঁচিয়া বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিও করছেন সদস্যরা।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে মৎস্য অধিদপ্তর দেশের নির্বাচিত এলাকায় কুঁচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের অধীনে বিরামপুর উপজেলা মৎস্য দপ্তর চলতি বছর উপজেলার সাঁওতাল (আদিবাসী) অধ্যুষিত এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে কুঁচিয়া চাষের প্রদর্শনী খামার চালু করে। এর মধ্যে উপজেলার শ্যামপুর, চন্ডিপুর, আয়ড়া, বেলডাঙ্গা ও কল্যাণপুর গ্রামে ৫টি অ্যাকোয়া কালচার এবং রতনপুর গ্রামে একটি মুক্ত জলাশয়ে প্রদর্শনী খামার রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নূর নবী জানান, কুঁচিয়ার চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি, পুষ্টি চাহিদার যোগান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্পের অধিনে এই প্রদর্শনীগুলো চালু করা হয়েছে। ছোট পরিসরে অ্যাকোয়া পদ্ধতি অর্থাৎ বদ্ধ জলাশয়ে কুঁচিয়ার চাষ করা যায়।তিনি আরো জানান, নিচে ও চারদিকে মোটা পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঘেরা দিতে হয়। ত্রিপল ও পলিথিনের উপর ৪ স্তরের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে কুঁচিয়ার আবাসস্থল তৈরি করা হয়। তৈরি অ্যাকোয়ার ভিতর পোনা ছেড়ে সামান্য খাবারেই সেগুলো অভাবনীয়ভাবে বেড়ে ওঠে। এদের রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি নেই।
কুঁচিয়ারা গুঁড়া মাছ, কেঁচো, শামুক, ব্যাঙাচি ও জলজ পোকামাকড় খেয়ে থাকে এবং একবার পোনা ছাড়লে পরবর্তীতে নিজেরাই বংশ বৃদ্ধি করে নেয়। মৎস্য কর্মকর্তা জানান, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ও নওগাঁর আত্রাই থেকে পোনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩শ’ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি প্রদর্শনীতে প্রায় দুই হাজার সংখ্যক পোনা ছাড়া হয়। মাত্র পাঁচ মাসে ওইসব পোনা কুঁচিয়া প্রতিটির ওজন হয়েছে ২৫০ থেকে ৪শ’ গ্রাম হয়ে যায়।
প্রফেসার পাড়া কুঁচিয়া চাষ প্রদর্শনী খামারের দলপতি নরেন পাহান জানান, কুঁচিয়ার স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং প্রতি কেজি কুঁচিয়া ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ধরনের একটি প্রদর্শনী খামার থেকে বছরে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার কুঁচিয়া পাওয়া সম্ভব। ছোট পরিসরে চাষাবাদ ও স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার কথা ভেবে অনেক মাছ চাষী ও এনজিও এই কুঁচিয়া চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এছাড়া সাঁওতাল (আদিবাসী) সম্প্রদায় আধুনিক পদ্ধতিতে কুঁচিয়া চাষে অধিক আগ্রহী হলেও এই দরিদ্র সম্প্রদায় অর্থাভাবে এগুতে পারছে না।
তিনি আরো জানান, কুঁচিয়া মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী পথ্য। এতে আমিষের পরিমাণ বেশি রয়েছে। এটি ব্যথানাশক, রক্ত পরিষ্কারক, রক্ত সঞ্চালন ও হজমশক্তি বৃদ্ধি, শ্বাস কষ্ট নিরাময় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। কুঁচিয়ার পুষ্টিগুণ ও রোগ নিরাময়কারী পথ্যগুণের কারণে দেশের বাজার ছাড়াও ভারত ও চীনে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম