কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ইলিশকে নিজস্ব পণ্য বলে দাবি করতে পারবে বাংলাদেশ ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ও ঐতিহ্য।পদ্মার ইলিশের খ্যাতি আছে বিশ্ব জুড়ে। এ কারণে জামদানির পর ইলিশের স্বত্ব বা মালিকানা সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মৎস্য অধিদফতর ইলিশকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য জিআই হিসেবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক স্বত্ববিষয়ক সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে ইলিশের নিবন্ধন করা হচ্ছে। রবিবার মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জিআই নিবন্ধনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিনিয়র শিল্প সচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার কাছে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ এই আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
আবেদন গ্রহণ করে শিল্প সচিব বলেন, বর্তমান সরকার জিআই পণ্য সহ মেধাসম্পদের মালিকানা সুরক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। জিআই পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ও নিবন্ধনের লক্ষ্যে বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সহায়তায় এরই মধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য জিআই পণ্যকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে। নিবন্ধন হলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশকে নিজস্ব পণ্য বলে দাবি করতে পারবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে কোনও দেশ আপত্তি করলে তখন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মৎস্য অধিদফরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, “ইলিশ মাছ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার সহ কয়েকটি দেশের উপকূলে পাওয়া যায়। কিন্তু পদ্মা ও মেঘনার রুপোলি ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ অন্য কোনও দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকী ভারতীয় অংশ গঙ্গায় যে ইলিশ পাওয়া যায়, তা স্বাদে-গন্ধে পদ্মার ইলিশের ধারেকাছেও নেই। ইলিশের সঙ্গে বাংলাদেশের নামটিই আগে আসে। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে এর নিবন্ধন হলে বিশ্বব্যাপী এর ব্র্যান্ডিং হবে। রফতানি পণ্য হিসেবে ইলিশের কদর বাড়বে। দামও পাওয়া যাবে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইলিশ পাবে আলাদা মর্যাদা।
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য বলতে বোঝায়, যে পণ্য ঐতিহ্যগতভাবে একটি এলাকার এবং যার উৎপত্তির সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে ওই এলাকার নাম জড়িয়ে আছে। অঞ্চলের নাম ঘিরে ওই পণ্যের বিশেষ খ্যাতি থাকে। জিআই পণ্য সম্পর্কে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের পরীক্ষক বেল্লাল হোসেন বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন হলে ওই পণ্যের ওপর বাংলাদেশের একক মালিকানা তৈরি হবে; বিশ্বে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। বিশ্বব্যাপী জিআই পণ্যের চাহিদা যেমন ভাল, তেমনই এর জন্য বাড়তি দাম দিতেও রাজি থাকেন ক্রেতারা।
জিআই নিবন্ধন পেতে হলে ওই পণ্য যে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমানা বা ভূখণ্ডে উদ্ভব বা তৈরি হয়েছে, তার ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে হয়। জিআই নিবন্ধন দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ওই প্রমাণপত্র সহ একটি প্রবন্ধ তাদের নিজস্ব জার্নালে প্রকাশ করতে হয়। জার্নালে প্রকাশের দুই মাসের মাথায় অন্য কোনও দেশের পক্ষ থেকে ওই তথ্যের ব্যাপারে যদি আপত্তি তোলা না হয় বা অন্য কোনও সংস্থা ওই পণ্যের নিবন্ধনের দাবি না করে, তা হলে যে দেশ প্রবন্ধ প্রকাশ করে জিআই নিবন্ধন চেয়েছে, সেই দেশের নামে পণ্যটি নিবন্ধিত হয়ে থাকে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম