কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরের ছয় শ’ বিঘা জমির ফুলকপি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। সময় পেরিয়ে গেলেও গাছে কোন ফুল আসেনি। ফলে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় এখন এলাকার কয়েকশ কৃষক। হাইব্রিড জাতের ফুলকপি চাষ করে মাথায় হাত উঠেছে তাদের। চাষীদের অভিযোগ, মল্লিকা সীড কোম্পানির বীজে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফুল আসেনি গাছে। চাষীদের অভিযোগ, গেল বছর এই উপজেলায় ফুলকপির আবাদ কম হয়েছিল। বাড়তি লাভের আশায় এবার ব্যাপক আবাদ করেন চাষীরা।
বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে নেমেছেন মাঠে। অনেকেই ঋণ নিয়ে শুরু করেন চাষ। আগেভাগেই লাগানো হয়েছিল চারা। শুরুতে হাইব্রিড জাতের এই ফুলকপির চারা বেড়ে উঠে বেশ ভালই। কিন্তু ফুল আসেনি কোন গাছেই। চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যে কপি ঘরে উঠবে এমন কথা থাকলেও ১০০দিন পেরিয়ে গেলেও ফুলই আসেনি। এখন কপিতে লাভ তো দূরের কথা কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের চাষী সানাউল হক বলেন, অন্যের ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিনি এবার হাইব্রিড জাতের ফুলকপি চাষ করেন। প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু ফুল না আসায় এক টাকাও উঠবে না। পুরো টাকাই জলে। সামনে আলু চাষের সুযোগ আছে। কিন্তু পুঁজি না থাকায় আলু চাষেও নামতে পারছেন না।
শুধু কৃষক সানাউলই নন, তার মতো এলাকার কয়েক শ’ চাষীর একই দশা। তাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকায় ঢাকার সিদ্দিক বাজারের মল্লিকা সীড কোম্পানি বীজ সরবরাহ করে আসছিল। কিন্তু এবার রীতিমতো প্রতারণা করেছে। একই এলাকার আরেক চাষী লালচাঁন জানান, তিনি ঋণ করে তিন বিঘা জমিতে মল্লিকার সীডের ম্যাজিক স্নো নামের ফুলকপির চারা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু কোন গাছেই ফুল হয়নি।
এদিকে মল্লিকা সীডের ফুলকপির চারা বিক্রি করে কৃষকদের তোপের মুখে পড়েছেন স্থানীয় ডিলার ও নার্সারি মালিকরাও। স্থানীয় নার্সারির মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি মল্লিকা সীডের ফুলকপি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। প্রতি কেজি বীজের দাম পড়েছে ২৬ হাজার টাকা।
তার কাছ থেকে চাষীরা বাকিতে চারা নিয়ে ফুলকপি চাষ করেছেন। কিন্তু ফলন না পাওয়ায় টাকা দিচ্ছে না। উল্টো তারা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে। রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়ার মল্লিকা সীড কোম্পানির বীজ ডিলার শহীদুল ইসলাম বলেন, তারাও এমন অভিযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই।
তার দাবি, বীজের ভালমন্দ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। শুধু বিক্রি করা তার কাজ। এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কেজেএম আব্দুুল আউয়াল বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসা করার কথা কোম্পানিগুলোর। কিন্তু কৃষকদের সরলতার সুযোগে প্রতারণা করেছে মল্লিকা সীড।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ/ কৃপ্র/ এম ইসলাম