কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গীর, গুতিয়াব, মধুখালী, নাওড়া, মাসাবোর মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপকরণ বাঁশ। এর তৈরি হাজি, ঢালা, কুলা, চালনি, পালি বা পলো, পানডালা, মাছ ধরার ঝুঁড়ি, চাটাই, খেলনা, কলমদানি, ফুলদানি, বাঁশি কিংবা গৃহসজ্জার বাহারি পণ্য বিক্রি করে সংসার চলে তাদের। এ অঞ্চলে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শতাধিক পরিবার।
মধুখালী এলাকার আফজলের (৪৫) সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমরা কারো কাছে প্রশিক্ষণ নিইনি। তবে আমাদের বাপ-দাদারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের কাছে শিখেছি বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কৌশল। এখন আমরা শেখাচ্ছি পরিবারের অন্যদের। আফজল আরো বললেন, কৃষকের বাড়ি থেকে কিনলে প্রতি বাঁশে খরচ পড়ে ১০০-১৫০ টাকা। কাঁচা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে হয়। বাড়ির অন্য সদস্যরা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। একটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ৬০০ টাকার পণ্য তৈরি করা যায়। মাসে গড়ে ২০-৩০টি বাঁশ কাজে লাগিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় সম্ভব।
উপজেলার মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, তারাব ও গোলাকান্দাইল হাটে বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি হয়। শীতল চন্দ্র দাস (৩৪) এ হাটে আসেন পণ্য বিক্রি করতে। প্রতি সপ্তাহে পণ্য বিক্রি হয় দেড় হাজার টাকার। লাভ থাকে ১ হাজার টাকার মতো। গুতিয়াব এলাকার তোফাজ্জল মিয়া (৩০), সুরশী রানী (৩৫), কানাই লাল (৪৫), সুরবালা (৪২) ও কৃষ্ণ কান্ত (৩৩) বাঁশ নিয়ে কাজ করেন। প্রতি বছর বিভিন্ন উত্সবকে কেন্দ্র করে তাদের থাকে বাড়তি ব্যস্ততা। অর্ডার পেয়ে পাইকারদের চাহিদা অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে হয় বলে জানান তারা।
ব্রাহ্মণখালী এলাকার সুলেখা রানী (৪০) মোড়া তৈরি করে সংসার চালান। মোড়া বিক্রি থেকে প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। স্বামী অমল ব্যাপারী এ কাজে সহযোগিতা করেন সুলেখাকে। বাঁশ কিনে আনেন তিনি। জানালেন মোড়া তৈরির কৌশল। বাঁশ চিরে ১০-১২ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর শলা তৈরি করা হয়। শলার সুতলি প্লাস্টিক ও রিকশার অব্যবহূত টায়ার দিয়ে তৈরি হয় ছোট, মাঝারি ও বড়— এ তিন ধরনের মোড়া। ছোট মোড়া ৮০, মাঝারি ১২০ ও বড়টি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি মোড়া বিক্রি করলে লাভ থাকে ৫০-৭০ টাকা। তারাব ব্রিজ এলাকায় বাবার বাড়ি থেকে মোড়া তৈরির কাজ শিখেছেন সুলেখা রানী। মোড়া তৈরির জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। সুলেখাকে দেখে মোড়া তৈরি করে উপার্জন করছেন প্রতিবেশী তুলসী রানী। তিনিও প্রতি মাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করেন।
এসব গ্রামাঞ্চলে বাইনি, নলি ও বররা— এ তিন ধরনের বাঁশ পাওয়া যায়। বাইনি ও বররা বাঁশ গৃহকাজে ও নলি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, হাজি, ডালা কুলা, পালি, পানডালা ও মাছ ধরার ঝুড়ি। প্রতিটি ডালা ৪০, খাঁচা ৬০, ঝুড়ি ১০০ ও পানডালা ৪০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। কুলা ও পালির চাহিদা থাকে বারো মাস। প্রতিটি কুলা ৯০ ও পালি ৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
বাঁশ শিল্পসংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, স্থানীয় কিছু এনজিও তাদের ঋণ দিয়ে সহায়তা করছে। এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র শিল্প। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের শোরুম নির্মাণের পাশাপাশি প্রতি বছর এসব নিয়ে মেলার আয়োজনও করা যেতে পারে। এতে গ্রামাঞ্চলে বেকারের সংখ্যা কমবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম