কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জের আত্রাই নদীতে জেগে ওঠা চরে পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকরা। নদীর চরে পেঁয়াজ চাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন বীরগঞ্জের ভূমিহীন কৃষকেরা। উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের কাশিমনগর গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীর উৎসমুখ ভারতের উজানে একতরফাভবে বাঁধ নির্মাণ করার ফলে শুকনো মৌসুমে এসব নদ-নদীতে চর পড়ে যায়। আর এ সুযোগে নদী তীরবর্তী ভূমিহীনরা নদীর চরকেই চাষাবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। আর নদী চরে পেঁয়াজ চাষ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে তাদের।
শুকনো মৌসুমে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর আত্রাই নদীর চরে পেঁয়াজ চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষককেরা। বর্তমানে রোপন পরবর্তী পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেঁয়াজ গাছের সবুজ রঙে বদলে গেছে নদীর চিত্র। অধিকাংশ চাষীই গত ৩/৫ বছর থেকে জেগে ওঠা চরে পেঁয়াজ চাষ করছেন। নভেম্বর মাস থেকে নদীতে পানি কমে গেলে বালু চরে পেঁয়াজ চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজে নেমে পড়েন চাষীরা।
পেঁয়াজ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিজস্ব জমি না থাকায় তারা নদীর জেগে উঠা চরে চাষাবাদ করে থাকেন। বর্ষার সময় পানির সাথে যে পলি পড়ে তা ক্ষেতের সার হিসেবে কাজে লাগে। তাই অতিরিক্ত সার দিতে হয় না এবং সেচের প্রয়োজন হয় না বলেই চলে। এ কারণে নদীর চরে পেঁয়াজ চাষ লাভ জনক। ভূমিহীন এলাহাজ মিয়া জানান, নদীতে পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ১০হাজার টাকা। বিপরীতে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আসে ৩৫থেকে ৪০ মণ। তা দিয়েই আমাদের কয়েক মাসের খাবারের জোগান হয়।
কৃষক মোঃ আব্দুর সহীদ মিয়া জানান, এর আগে এই চরে ধান চাষ করেছিলেন। গত বছর থেকে পেঁয়াজ চাষ করছেন। ভালোই লাভ হয়েছে পেঁয়াজ চাষে। আবাদের টাকা দিয়ে সন্তানের বই,খাতা,পোশাক। সংসারের অনেকটা অভাব দুর হয়েছে এই পেঁয়াজ চাষে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে স্ত্রীসহ প্রায় ১০ বছর ধরে বাস করছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। নিজের জমি না থাকায় বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে গত কয়েক বছর থেকে পেঁয়াজ চাষ করছি। পেঁয়াজ আবাদের আয় থেকে পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে। সে কথা মাথায় রেখে পেঁয়াজ চাষের আয় থেকে প্রতি বছর কিছু টাকা সঞ্চয় করি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নদী চরে চাষাবাদ এখন বেশ চোখ পড়ছে। নদীর চরে চাষাবাদে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খুব একটা প্রভাব পড়ে বলে আমার জানা নেই। তবে স্থানীয় ভূমিহীদের দারিদ্রতা দুরীকরণের ক্ষেত্রে নদীর চরে চাষাবাদ বেশ ভূমিকা রাখছে। এতে অনেকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
সুত্রঃ সংবাদ প্রতিদিন / কৃপ্র/এম ইসলাম