কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সুগন্ধি ‘কালোজিরা’ ধান। বেশি খরচ, কম লাভের কারণে এই ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। এক সময় কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল কালো জিরা ধান। সর্বত্র চাষ হতো কালো জিরা ধান। গ্রামীণ জীবনে এই ধানটি ছিল অপরিহার্য। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সংরক্ষণ করা হতো কালো জিরা ধান। সুগন্ধি এ চালের নাম শুনলে জিভে জল আসে।
এই সুগন্ধি চিকন চাল দিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি হয় পিঠা-পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ আরো সুস্বাদু মুখরোচক নানা ধরনের খাবার। বিভিন্ন পূজা-পার্বণের ভোগ, মিষ্টান্ন রান্নার কাজে কালো জিরা চাল ব্যবহার করে।কিন্তু এসবই এখন কালের স্মৃতি। গ্রামের হাট বাজারে এখন আর এই চাল পাওয়া যায় না। বিলুপ্তির পথে এ সুগন্ধি ধান। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য অনুযায়ী বাড়িতে জামাই এলে শ্বশুর বাড়িতে চিকন চালের ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। নিম্ন, মধ্য, গরীব হলেও দিনে এক বেলা অবশ্যই একবার এই চালের ভাত রান্না হতো। এ ধান কাটার সময়কে ঘিরে গ্রাম বাংলা মেতে উঠত নবান্নের উৎসবে।
বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন জাতের ধান আবাদকারী কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জাতের ধানের ফলন হয় কম। বিঘা প্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ উৎপন্ন হয় সেখানে এই জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ ৮ মণ পর্যন্ত। তবে বাজারে দাম দ্বিগুন পাওয়া যায়। সার, সেচও পরিচর্যাও লাগে কম। সে হিসেবে আবাদে লোকসান হয় না বললেও চলে। এখনো গ্রামের গৃহস্থ পরিবারের কাছে এই ধানের কদর যথেষ্ট। এখনো প্রতি কেজি এই জাতের ধানের চাল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তবে এই চাল সচরাচর সবখানে পাওয়া যায় না।
তবে কালো জিরা জাতের ধানের চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেলেও বীজের অভাবে অনেকের পক্ষে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু সোনালী ধানের সমারোহ। তবে প্রত্যেক মাঠের মাঝখানে দোল খাচ্ছে দুই একটি জমিতে কালো জিরা জাতের ধানের থোকা থোকা কৃষ্ণবর্ণ শীষ। সারা মাঠের মধ্যে একখন্ড এই ধান ক্ষেত দূর থেকে দেখলে মনে হবে, এ যেন কোনো চিত্র শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা ছবি। এই জাতের ধান সাধারণত কালো বর্ণের হয়। কালো জিরা চালের ভাত রান্না করলে মৌ মৌ গন্ধে ভরে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা কালো জিরা ধান বিলুপ্তির পথে স্বীকার করে বলেন, এক সময় এই ধান অনেক বেশি চাষ হতো। ফলন কম হওয়ায় এই ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে। বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন কম হয় বিধায় কৃষকরা এই ধানের চাষ কম করেন। এর বিকল্প হিসাবে ব্রি-ধান ৩৪ চাষ হচ্ছে। কৃষকরা নিজ আগ্রহে এই জাতের ধান চাষ করেন। এ ধানটি দেশীয় জাতের ধানের মধ্যে অন্যতম। এটি হুবহু কালো জিরার মতো এবং ফলনও বেশি।
কৃপ্র/ এম ইসলাম