কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ নিজের মা-কে ফুলের রাণী বানিয়েছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মতিউর রহমান। ফুলের একটা নামই যদি হয়ে যায় মায়ের নামে, ব্যাপারটা কিন্তু দারুন। আর ‘মা’ কে এ সম্মান জানানোর সুযোগটা তাই হাতছাড়া করেননি রাজশাহীর এগ্রোব্যাকের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও গবেষক মতিউর রহমান। আমেরিকান গোলাপ নামে প্রসিদ্ধ ‘ইউস্টোমা’ নামের ফুলটি প্রায় গোলাপ ফুলের মতো দেখতে যা কিনা নন্দিনি নামেও পরিচিত। গত দশক থেকে জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের দেশে দেশে এই ফুলের জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক উৎপাদন বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশে ফুলের এই নতুন রাণীর অভিষেক ঘটিয়েছেন মতিউর। বিজ্ঞানীর মায়ের নাম মোসা. অলোকা বেগমের নামে নামকরণ করেছেন। ফুলটির বাংলা নাম ‘অলোকা’ রাখার প্রসঙ্গটি টানতেই বললেন, ‘নিজের নামে নাম রাখার নজির থাকলেও মায়ের নামে নাম রাখার কথাটা শুনিনি কখনও। মায়ের প্রতি সম্মান জানাতেই নামটি রেখেছি। অলোকা নামে এর রেজিস্ট্রেশনও করছি।’ ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালীতে অভিষেক হয় ফুলের নতুন এ রাণীর।
ফুলটির চমত্কার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি প্রায় ৮০ রঙের হয়ে থাকে। বেশিরভাগেরই রঙ দুটো। কোনো কোনো ফুল তিন রঙেরও হয়। লাল, সাদা, গোলাপি, অফ হোয়াইট, হলুদ রঙেও ফুলটি পাঁপড়ি মেলে। সাধারণত এই ফুল গাছ থেকে তোলার পর প্রায় ২০ দিন এবং গাছে ফোটা অবস্থায় ৩৫ থেকে ৪০ দিন সতেজ থাকে। অলোকা বা ইউস্টোমা ফুলের ইংরেজি নাম লিসিয়ানথাস। এর বৈজ্ঞানিক নাম ইউস্টোমা গ্রান্ডিফোরাম। জাপানি ভাষায় তরুকোগিকিও এবং আমেরিকাতে আমেরিকান গোলাপ নামেই পরিচিত। জেনেটিনসিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ এটি। এটি মূল কান্ড এবং পাতায় বিভক্ত, পাতার রঙ নিলাভ সবুজ রঙের। গাছটি লম্বায় ২০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়।
মতিউর জানান, কৃষকেরা এই ফুলের চাষ করলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবেন। কেননা একটি চারা লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যে ফুল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি চারা থেকে অন্তত ৫টি স্টিক পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, গতবছরের জুলাই মাসে ফুলের জাতটি তিনি জাপান থেকে আনান। এরপর নিজস্ব ল্যাবে গবেষণা করে ফুল ফোটান। ফুলের ছবি নিজস্ব ওয়েবপেজে দেন। সেখানে দেখে ইউএসএআইডি সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, অধিক ফলন, রোগমুক্ত চারা, একসঙ্গে একই বয়সের অনেক চারা পাওয়া ও ফুলের গুণগত বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য টিস্যু কালচার অপরিহার্য।
মতিউর বলেন , সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কৃষকের কল্যাণের কথা সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে মো: মফিজুল ইসলাম এবং তার যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত এবং আধুনিক একটি কৃষি উদ্যোগ এগ্রোব্যাকের। তিনি বলেন এগ্রোব্যাক কোন প্রচলিত গবেষনা প্রতিষ্ঠান না হলেও টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন উদ্ভিদের অনুচারা উৎপাদন করতে সক্ষম। তিনি এ পর্যন্ত সাফলতার সাথে সর্বপ্রথম জারবেরা, পাউলোনিয়া, ড্রাগন ফ্রুট, পান, লিলিয়াম, আখসহ ১১ টি উদ্ভিদের অনুচারা তৈরি করে এগ্রোব্যাকের মাধ্যমে সেগুলো বাণিজিকভাবে বিরতণ হচ্ছে ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম