কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নোয়াখালী জেলার ঐতিহ্যবাহী ভুলুয়া খালের দুই পাড়ের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকিতে রয়েছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ভুলুয়া খালের অন্তত ২০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দুই পাড়ের রাস্তা, সোনাপুর-লক্ষ্মীপুর ভবানীগঞ্জ ডিবি সড়কে নির্মিত ব্রিজ ও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের বেশকিছু অংশ ভুলুয়া খালে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া যেকোনো সময় খালে ধসে যেতে পারে বসতবাড়িগুলোও।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস আগে সদর উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভুলুয়া খালের অন্তত ২০টি স্থান থেকে বালি উত্তোলনের কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের চিশতিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মোড় থেকে বাংলাবাজার আশ্রয়ণ সূর্যনারায়ণপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার, সোনাপুর-লক্ষ্মীপুর ভবানীগঞ্জ ডিবি সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের জন্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় ওই খাল থেকে। ফলে ওইসব এলাকায় এখন ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন খাল এটি। একসময় খালটিকে ভুলুয়া নদী বলা হতো। তখন এ খালের প্রস্থ ছিল অনেক বেশি। মাছ ধরার নৌকা, পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌকা এমনকি ইঞ্জিনচালিত নৌকাও প্রতিনিয়ত যাতায়াত করত ভুলুয়া নদী দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে নদীর দুই পাশ দখল হওয়ায় এটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। তবে খালে স্লুইস গেট থাকায় জোয়ারের পানি আটকে রেখে কৃষিজমিতে সেচ কাজেও ব্যবহার করা হয়।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, দু-তিন মাস আগে ১৯ নং পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আলম ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভুলুয়া খাল থেকে বালি উত্তোলন। এ সময় স্থান পরিবর্তন করে মেশিন দিয়ে খালের অন্তত ২০টি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। ফলে খালের দুই পাড়ঘেঁষা বাড়িঘর ও রাস্তার বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি কোথাও ধসে পড়েছে। ওই বাসিন্দা আরো বলেন, ওই সময় বালু উত্তোলন না করার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হলেও তিনি কানে তোলেননি সে কথা। উল্টো দুর্ব্যবহার করেন।
ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের আবুয়ার ডগি এলাকার এক নারী তার বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ি দেখিয়ে বলেন, রাস্তা পাকা করার উদ্দেশ্যে ভুলুয়া খাল থেকে বালু উত্তোলন করায় রাস্তাসহ আমাদের বাড়ির পূর্বপাশ খালে ধসে পড়েছে। শুধু আমাদের বাড়িই নয়, এ রকম আরো অন্তত ৫০টি বাড়ি আছে, যেগুলো বালি উত্তোলনের কারণে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ওই সময় বালি উত্তোলন না করার জন্য চেয়ারম্যানকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি শোনেননি। ড্রেজার মেশিন লাগানো অবস্থায় ভাঙন শুরু হলে আমরা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। কিন্তু সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারদের কাছ থেকে সড়কে বালি ফেলার দায়িত্ব নেন চেয়ারম্যান। কিন্তু বালি বাইরে থেকে না এনে অবৈধভাবে খাল থেকে উত্তোলন করে রাস্তায় ফেলা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের ফলে এখন বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এদিকে খালের পানি কমে গেলে ভাঙন আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে খালের দুই পাড়ের বাড়িঘর ও রাস্তা ধসে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
ভাঙনের বিষয়টি স্বীকার করে ১৯ নং পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বালি উত্তোলনের কারণে এ ভাঙন দেখা দেয়নি। খালের দুই পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগ থেকে। তখন আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তিগতভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, ব্যক্তি দ্বারা বালি উত্তোলনের ফলে যদি ভাঙন বা অন্য কোনো ক্ষতি হয়, তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। এ বিষয়ে নোয়াখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা নুরুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম