কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ: বাঁশকে গরিবের কাঠ বলে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই বাঁশ দিয়ে ঘর-বাড়ি নিমার্ণ করে থাকে। বাঁশ গ্রামীণ কুটির শিল্পসহ কাগজ ও রেয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। দেশের অর্থনীতিতে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। দুটি পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করা যায়। মোথা বা রাইজম পদ্ধতি এবং লেয়ারিং বা শোয়ানো পদ্ধতি। এছাড়া বাঁশের বীজ বা চারার মাধ্যমে বাঁশ চাষ করা যায়।
বীজ থেকে বাঁশের চারা তৈরি:বাঁশের সারা জীবনে একবার মাত্র ফুল ফোটে। প্রজাতি ভেদে ২০ থেকে ১০০ বছর পর বাঁশের ফুল ধরে। ফুল ধরলে বাঁশ ঝাড় মরে যায়। তখন বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করে পলিব্যাগে বপন করে চারা উৎপাদন করতে হয়।
স্থান নির্বাচন: সাধারণত ডোবা, নালা, খাল, পুকুর বা বসতবাড়ির আশেপাশে অনাবাদি জমিতে বাঁশ চাষ করা হয়। দো-অাঁশ এঁটেল দো-অাঁশ মাটিতে বাঁশ ভাল জন্মে।
গর্ত তৈরি: চারা রোপণ করার জন্য ১৫ থেকে ২০ দিন আগে থেকে নির্বাচিত স্থানে মাটি গর্ত করতে হয়। ৩০ সেন্টি মিটার গভীর এবং ২০ সেন্টি মিটার চওড়া গর্ত করতে হবে।
সার প্রয়োগ: প্রতি গর্তে পচা গোবর ২ কেজি, টিএসপি ১০ গ্রাম, এমপি ৫ গ্রাম মাটির সাথে মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন রাখতে হবে।
চারা রোপণ: এক বছর বয়সের চারা উক্ত গর্তে রোপণ করতে হয়। চারা রোপণ করে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব ৫ থেকে ৬ মিটার দিলে ভাল হয়।
চাষের পরিচর্যা: খরা হলে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। কচুরিপানা দিয়ে চারার গোড়া ঢেকে দিলে মাটি ভেজা থাকে। বাঁশ ঝাড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কোনো বাঁশ রোগে আক্রান্ত হলে তা মোথাসহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত কঞ্চি হলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের দিকে ছাটাই করতে হবে। তিন বছর পর পর বর্ষার পরে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার দিতে হবে। কোনো বাঁশ ঝড়ে ভেঙে গেলে কেটে সরাতে হবে। বাঁশে পোকা-মাকড় আক্রমণ করলে কীটনাশক দিতে হবে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে।
কাটার সময়: সাধারণত দু’বছর বা তার বেশি বয়সের বাঁশ কাটা উচিত। বনাঞ্চলে সরকারিভাবে সাধারণত তিন বছর পর পর বাঁশ কাটা হয়। পরিপক্কতার লক্ষণগুলো হল- বাঁশের কাণ্ডের সবুজ বর্ণ ধূসর হয়ে গেলে, কাণ্ডে টোকা দিলে ধাতব শব্দ হলে, কাটার পর শুকিয়ে কুঁচকে গেলে।
কৃপ্র/এম ইসলাম