‘নিপা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার একমাত্র কারণ হলো কাঁচা খেজুরের রসে বাদূরের লালা’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আর রক্ষা নেই। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের শতকরা ৮০ জনেরই মৃত্যু হয়। বিগত কয়েক বছর থেকে শীত মৌসুমে এ ভাইরাসের প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে কোনো রোগ প্রতিরোধ করতে হলে আতঙ্কিত না হয়ে সর্ব প্রথম এর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। এটি কিভাবে বিস্তার হয়, সংক্রমিত হলে কী করণীয়, প্রতিরোধের উপায় কী এসব জানা থাকলে যে কোনো জীবাণু প্রতিরোধ করা খুব কঠিন কিছু নয়।
নিপা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার একমাত্র কারণ হলো কাঁচা খেজুরের রস পান করা। রাতের বেলায় খেজুর রস খাওয়ার সময় বাদূরের লালা থেকে এই ভাইরাস রসে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ওই রস পান করার মধ্য দিয়েই নিপা ভাইরাস মানব দেহে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত রোগী থেকেও অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।
নিপা ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশের ৮ দিন পর বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। এগুলো লক্ষণের মধ্যে জ্বর, প্রলাপ বকা এবং অজ্ঞান হওয়া অন্যতম। কাজেই শুধুমাত্র কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া বন্ধ করেই এই ভাইরাস একশত ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, বাংলাদেশে শীতকালে খেজুরের রস পান করার ঐতিহ্য রয়েছে।
অনেক এলাকায় ভোরে কলসিতে করে খেজুর রস বিক্রি করার রেওয়াজ রয়েছে। অনেকের খেজুর রসের প্রতি বিশেষ দুর্বলতাও রয়েছে। যে সব এলাকায় খেজুর গাছ বেশি বা যে সব এলাকার লোকজন বেশি বেশি খেজুরের রস পান করেন সেসব এলাকায় এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
এ ভাইরাস আমাদের দেশে অজ্ঞাত রোগ হিসেবে সর্বপ্রথম নজরে আসে ২০০১ সালে। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার মাধ্যমে একে নিপা ভাইরাস বলে শনাক্ত করা হয়। এর আগে মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির সংক্রমণের কথা জানা যায়। এখন বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় না।
নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কেউ যেন কোনোভাবেই কাঁচা খেজুরের রস পান না করেন। কেউ খেজুরের রস পান করতে চাইলে যেন অবশ্যই রস গরম করে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে পান করেন। ৭০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রাতেই নিপা ভাইরাসের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা তো বটেই সারাদেশেই এ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। আর সকলকে সতর্ক থাকতে হবে কারো নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম