কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ভাসমান ধাপে সবজি ও মসলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে চার শতাধিক পরিবার। এ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এতে দিন দিন তাদের মধ্যে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার অধিকাংশ জমিতেই পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা নেই। ফলে বছরের ছয় মাস জমিগুলোয় পানি জমে থাকে। ফলে এ সময় তারা কোনো ফসল চাষ করতে পারেন না। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নে একটি সমিতি করা হয়। এর মাধ্যমে এসব সমিতির সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলোকে প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ, বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সহায়তা দেয়া হয়।
এ পদ্ধতিতে জমির বিকল্প হিসেবে মাঠের আগাছা ও খাল-বিলের কচুরিপানা ব্যবহার করে বেড বা ধাপ তৈরি করা হয়। কয়েক বছর আগে থেকেই বাশাইল গ্রামের কৃষকরা বেড বা ধাপে সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। সরকারি সহায়তা পাওয়ার পর তাদের সঙ্গে অন্য এলাকার কৃষকরাও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ শুরু করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাশাইল গ্রামে বর্তমানে ৫০ হেক্টর বেডে সবজি ও মসলা চাষ হচ্ছে। আর উপজেলার মোট সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমি ভাসমান সবজি ও মসলা চাষের আওতায় আনার কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে।
উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের গোয়াইল গ্রামের মিরাজ বিশ্বাস, সিরাজ, বেল্লাল হোসেন, তোফাজ্জেল হোসেন, খালেক সরদার ও ছোট বাশাইল গ্রামের সামছু জানান, প্রথম পর্যায়ে বেড বা ধাপে সবজি উৎপাদনে সফলতা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ ছিল। পরে স্বল্প সময় ও ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জন হলে অনেকেই এখন এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন।
বাশাইল গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন ও খালেক সরদার জানান, তাদের বাবাও বেডে সবজি ও চারা তৈরি করে বিক্রি করেছেন। এখন তারাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে বিভিন্ন জাতের সবজি চারা চাষের কার্যক্রম শুরু হয়। চাষীরা এ সময় বিশেষ প্রক্রিয়ায় কচুরিপানা একত্র করে রাখেন। কয়েক দিনের মধ্যেই এতে পচন ধরে। এ কচুরিপানাই পরে ধাপে পরিণত হয়। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈব সার থাকার কারণে চারাগুলো অত্যন্ত দ্রুত বেড়ে ওঠে। প্রত্যেকটি ভাসমান ধাপে চারবার চারা উৎপাদন করা যায় বলে জানান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে এক মাস পরিচর্যার পর চারা বিক্রি করলেও পরবর্তীতে ১৫-২০ দিনের মধ্যেই ফের চারা বিক্রি করা যায়। গ্রাম থেকেই এসব চারা পাইকাররা এসে নিয়ে যান। মাদারীপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, স্বরূপকাঠি, মাগুরা, ফেনীসহ স্থানীয় হাট-বাজারের এগুলো বিক্রি হয়।
এসব ধাপে উৎপাদিত সবজির মধ্যে লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটা, মরিচ, করলা, হলুদ, শসা, মিষ্টি কুমড়া ও লাউ অন্যতম। প্রায় সারা বছরই এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ হয়ে থাকে। চারা ও সবজি উৎপাদন করে উপজেলার চার শতাধিক পরিবার এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে উপজেলার দক্ষিণ নাঘিরপাড়, চাঁদত্রিশিরা, বাগধা, পার্শ্ববর্তী উজিরপুরের সাতলা, জলা, কোটালীপাড়ার বিশারকান্দি, ধারাবাশাইল, মাচারতারা, তালপুকুরিয়া, ডুমুরিয়া, তারাকান্দর, ছত্রকান্দা, পিঞ্জুরী, রামশীল, কলাবাড়ী, শুয়াগ্রাম, সাতুরিয়া, আলামদি, নারায়ণখানা ও সাদুলাপুর গ্রামের চাষীরা ধাপের ওপর সবজি ও চারা উৎপাদন পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়, এ পদ্ধতিতে খরচ কম কিন্তু আয় বেশি। ফলে দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ধাপের ওপর সবজি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম