‘দৈনিক আবর্জনা ৩৫০০ টন অপসারণ ১৯০০ টন’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে খুব দ্রুত স্মার্ট সিটি গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন। ডিএসসিসি বর্জ্যবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট আবর্জনা অপসারণ করা হয় ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮৪ টন। সেই হিসেবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১ হাজার ৮০০ টন। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডিএসসিসি মোট আবর্জনা অপসারণ করে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৩ টন। সেই হিসেবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১ হাজার ৯০০ টনের কিছু বেশি। বিগত এক বছরে বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ টনের কিছু বেশি। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করলেও আবর্জনা অপসারণে সাফল্য দেখাতে পারেনি ডিএসসিসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, । এর মধ্যে দৈনিক অপসারণ করা হচ্ছে এক হাজার ৯০০ টন। বাকি ১ হাজার ৬০০ টন আবর্জনা যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে। এসব বর্জ্যের কিছু অংশ টোকাইরা সংগ্রহ করে নিচ্ছে এবং অবশিষ্ট বর্জ্য রাজধানীর বিভিন্ন নিচু এলাকা, ডোবা-নালা এবং কিছুটা নদীতেও পড়ছে। ফলে এসব আবর্জনা দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ পুরাণ ঢাকার বিভিন্ন ডোবা-নালা এবং নদী-খাল ভরাট হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব আবর্জনা ডিএসসিসি এলাকার পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির বর্জ্য বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিনিয়তই মানুষ বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় তাদের পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়েনি। যে কারণে পুরাণ ঢাকার এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বর্জ্য অপসারণে হিমশিম খেতে হয়। ডিএসসিসির চলতি বছরের বাজেটে নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও পরিচ্ছন্ন বছরে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি সংস্থাটি। তবে, ৮০ শতাংশ বর্জ্য অপসারণের দাবি করেন ডিএসসিসির বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন। তিনি জানান, ডিএসসিসি এলাকায় দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার টন বর্জ্য ডিএসসিসি অপসারণ করা হয়েছে।
সরেজমিন রাজধানীর লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার শাখানদীকে ওই এলাকার মানুষ আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। ডিএসসিসি এলাকাভুক্ত হলেও ওই এলাকার আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। অবাক হলেও সত্য, সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বেড়িবাঁধের ঢালে। সেসব জায়গায় দখলদার চক্র অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছে। পুরান ঢাকার চকবাজারসহ আশপাশের এলাকার সড়কগুলোর যত্রতত্র আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সোয়ারিঘাট, চকবাজার, বাবুবাজার, পোস্তগোলাসংলগ্ন প্রবাহ বুড়িগঙ্গায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন ড্রেনেজ লাইনের মাধ্যমে পয়োঃবর্জ্যের সঙ্গে এসব আবর্জনা মিশছে ঢাকার প্রাণখ্যাত প্রবহমান বুড়িগঙ্গা নদীতে।
এদিকে, আবর্জনার স্তূপের কারণে হাজারীবাগ খালের চিহ্নই বোঝার উপায় নেই। ট্যানারি সৃষ্ট বর্জ্যগুলো বাছ-বিচার ছাড়াই এ খালে ফেলা হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে, খিলগাঁও-বাসাবো এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সেগুনবাগিচা খালের। সবুজবাগের নন্দীপাড়ের খালও আশপাশের বসবাসকারীদের আবর্জনায় ভর্তি। এ খালের পানি চলাচল বন্ধই হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে অনেক জায়গায় পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আশপাশের বাসা-বাড়িতে পানি উঠে যায়। কোনো কোনো সড়কও এ সময় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।
ডিএসসিসির স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যমতে, এলাকাবাসী ডিএসসিসির আওতাভুক্ত ডোবা-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলায় তাদের সেসব পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এ জন্য বাৎসরিক বড় অর্থও খরচ করতে হচ্ছে। চলতি বছরে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ বা খিলগাঁও, বাসাবো, সবুজবাগ, গোড়ানসহ আশপাশের এলাকার ৩১২ বিঘা জলাশয়, ডোবা-নালা পরিষ্কার করেছে। অঞ্চল-৩ বা লালবাগ, হাজারীবাগ, চকবাজার এবং কামরাঙ্গীরচর এলাকার প্রায় ৩২ বিঘা ডোবা-জলাশয় পরিষ্কার করেছে। আর অঞ্চল-৫ বা সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী এবং শ্যামপুরসহ আশপাশের এলাকার ১৪৪ বিঘা ৯ কাঠা ডোবা-জলাশয়ের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশিষ্টরা জানান, এর পরও ওইসব জলাশয় আবারও আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ঠিকমতো ওইসব এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এলাকাবাসী ডোবা-নালাকে আবর্জনা ফেলার উপযুক্ত স্থান বিবেচিত করে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য-ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ডিএসসিসি ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় ডিএসসিসি এলাকার বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে। আমরা সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখি তৎপরতা চালাচ্ছি। তবে তিনি দাবি করেন, ডিএসসিসি এলাকার আবর্জনা ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছে ডিএসসিসি।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, তাদের প্রচেষ্টার ফলে ডিএসসিসির এলাকার আবর্জনা অপসারণের চিত্র বদলাচ্ছে। রাতারাতি সব কিছু বদলে ফেলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা নগরবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছেন। নগরবাসীর সচেতনতা ছাড়া টেকসই বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এ সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিচ্ছন্ন স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
সুত্রঃ যায়যায় দিন / কৃপ্র/এম ইসলাম