আনু মোহাম্মদ: শোল মাছকে আমরা রাক্ষুসে মাছ হিসেবেই জানি। শোল মাছ আমাদের দেশে এখন প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতীর মাছ হয়ে যাচ্ছে। শোল মাছ বাজারের দামি মাছ। শোলের দাম কেজিপ্রতি তিনশ’ টাকার কম নয় অথচ তা চাষে খরচ খুবই নিন্ম। শোল মাছ সব ধরনের দুর্যোগ যেমন খরা, অতিবৃষ্টি কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতি সবকিছু সহ্য করতে পারে- যা অন্য মাছের জন্য কঠিন। মা শোল মাছই নিজেদের মতো করে ডিম নার্সিং ও পোনা লালন করে। শত্রু মাছের কবল থেকে নিজেই ঠেকায়।
পুকুর প্রস্তুতিঃ– যে কোন পুকুরেই শোল মাছ চাষ করা যাবে তবে তাকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে।যেই পুকুরে শোল চাষ হবে সেই পুকুরে কচুরীপানা অথবা কলমি লতা থাকলে ভাল কারন শোল মাছ আড়ালে আবডালে থাকতে পছন্দ করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কচুরীপানায় যেন পুকুর ভরে না যায়। পুকুরের চারদিকে কমপক্ষে ৫ ফুট উচ্চতায় জাল দিয়ে বেড় দিত হবে। অন্যথায় বর্ষাকালে শোল মাছ লাফিয়ে চলে যাবে।
পোনা মজুতঃ- বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে শোল মাছের চাষ হয় না সেজন্য শোল মাছের পোনা পাওয়া দুষ্কর। তাই প্রাকৃতিক ভাবে সংগ্রহের উপর জোর দিতে হবে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শোল মাছের পোনা উৎপাদন করা খুবই সহজ। বৈশাখ মাস শোল মাছের প্রজনন মৌসুম।বৈশাখ মাসের প্রথম থেকে শোল মাছ বাচ্চা দিতে শুরু করে। বাচ্চাগুলো এক ঝাঁকে থাকে। সেই সময় হাওড়-বাওড়, পুকুর থেকে সপ্তাহখানেক বয়সের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। যদি পোনা না পাওয়া যায় তাহলে বড় শোল মাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। একক ভাবে প্রতি শতাংশে ১০ টি দেয়া যেতে পারে আর মিশ্র পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ৪টি । এর থেকে বেশী না দেয়াই ভাল একটি প্রাপ্ত বয়স্ক শোল মাছ লম্বায় ২.৫-৩ ফিট হতে পারে।
খাদ্যঃ- শোল মাছ যেহেতু বানিজ্যিক ভাবে চাষ এই পর্যন্ত হয়নি তাই শোল মাছের খাদ্য নিয়ে খাদ্য নিয়ে গবেষনা হয়নি। কিছু মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে শোল মাছ সাধারনত খৈল বা কুড়া দিয়ে বানানো খাবার খায় না।ছোট মাছই এর প্রধান খাদ্য।পোনা মাছের প্রিয় খাদ্য শুটকির গুড়ো সে জন্য পোনা মাছকে খাবার হিসেবে চিংড়ি শুটকির গুঁড়া ভালভাবে পিষিয়ে দিতে হয়। এভাবে ১৫ দিন খাওয়ানোর পর পোনাগুলো প্রায় ২/৩ ইঞ্চি সাইজ হবে। ২/৩ ইঞ্চি পোনা মজুদের পর খাদ্য হিসেবে কার্প জাতীয় মাছের ধানীপোনা দেয়া যেতে পারে সাথে ছোট ছোট ব্যাঙ বা ব্যাঙাচি দেয়া যেতে পারে। এরপর পোনাগুলোকে চাষের জন্য অবমুক্ত করতে হবে। আর বড় মাছের জন্য ছোট ছোট মাছ, তবে মরা টাটকা মাছ খেতে দিলে এরা খুব খায়।আমাদের দেশে বাস্তবতার নিরিখে শোল মাছের একক চাষের সম্ভবনা খুবই কম। কারণ এত কাঁচা মাছ বা শুটকির বা ব্যাঙ বা ব্যাঙাচি, জোগান দেয়া প্রায় অসম্ভব। তাই মিশ্র মাসের সাথে শোল মাছের চাষ করে দেখা যেতে পারে। ৬ মাসে এক একটি শোল মাছের ওজন ৭০০-১০০০ গ্রামের উপর সম্ভবনা আছে। (জাকির হোসেনের শোল মাছ ৭ মাসে ৮০০ গ্রামের উর্দ্দে হয়েছে)
রোগঃ– শীতকালে শোল মাছে ক্ষত রোগ দেখা দেয় তাই সে সময় মহস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে।
অতিমাত্রায় মুনাফার জন্য অপরিকল্পিত হাইব্রিড মাছ চাষে আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। হাইব্রিড মাছের ভীড়ে বিলুপ্তির পথে থাকা দেশী মাছ মাছগুলো পুকুর জাতীয় জলাশয়ে চাষ করে এদের সংখ্যা আমরা বাড়াতে পারি।মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি বা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সকলকে এখনই এগিয়ে আসা উচিৎ। অন্যথায় আগামী কয়েকবছরে দেশীয় মাছের কোনরূপ চিহ্ন খোজে পাবেনা আগামী প্রজন্ম।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- শোল মাছ নিয়ে যদি কারো কাছ কোন বাস্তবভিত্তিক কোন অভিজ্ঞতা বা তথ্য থাকে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করা হইল।
আনু মোহাম্মদ
[email protected]
কৃপ্র/ এম ইসলাম