কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নতুন জাতের বিভিন্ন মসলা উদ্ভাবনে এখন সফল নাম ‘বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র’।এ কেন্দ্র শুধু পেঁয়াজেরই পাঁচ ধরনের জাত উদ্ভাবন করেছে। গত ১৫ বছরে এ গবেষণা কেন্দ্রে ১৪ ধরনের মসলার মোট ৩১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো বেশকিছু মসলার জাত উদ্ভাবনের গবেষণা। তবে চাহিদামতো বরাদ্দ না থাকায় গবেষণার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে নতুন জাত উদ্ভাবনে আরো বেশি সফলতা আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতায় বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৭০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এ মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ২৬টিরও বেশি মসলা নিয়ে গবেষণা হয়। এখানে মসলার জাতের উন্নয়ন, উদ্যানতত্ত্ব, কীটতত্ত্ব, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ প্রজনন, বিভিন্ন মসলার ফিজিওলজি, ব্রিডিং পদ্ধতি, জৈব প্রযুক্তি, উদ্ভিদ পুষ্টি, সেচ, আন্তঃপরিচর্যা, বীজ উত্পাদন, রোগ ও পোকামাকড় দমন, শস্য সংগ্রহের ব্যবস্থাপনা ও বাজার পদ্ধতির ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর এ গবেষণার ফলাফল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় কৃষকদের মাঝে।
এ কেন্দ্রের গাজীপুর, মাগুড়া ও কুমিল্লায় তিনটি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং সাতটি উপকেন্দ্র রয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, হলুদ, আদা, মেথি, ধনিয়া, মৌরি, গোলমরিচ, কালো জিরা, পান, পাতা পেঁয়াজ, বিলাতি ধনিয়া, আলু বোখারা, দই রঙ, রাঁধুনি, ফিরিঙ্গি, এলাচ, কালো এলাচ, জিরা, লং, একাঙ্গি, দারচিনি, তেজপাতা, চাইনিজ চিপস (চাইনিজ খাবারে ব্যবহার হয়), কারিপাতা, জায়ফল, জয়ত্রী প্রভৃতি মসলা নিয়ে গবেষণা হয়। এর মধ্যে বগুড়ায় ১৪টি মসলার ৩১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলো হলো পেঁয়াজ পাঁচ প্রকার, মরিচ তিন প্রকার, রসুন ৪ প্রকার ও হলুদ পাঁচ প্রকার। এছাড়া এক প্রকার করে আদা, গোলমরিচ, কালোজিরা, পাতা পেঁয়াজ, বিলাতি ধনিয়া ও আলু বোখারার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আর দুই প্রকার করে উদ্ভাবন করা হয়েছে মেথি, ধনিয়া, মৌরি ও পান।
গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ৭০ একর জায়গাজুড়ে বিভিন্ন মসলার জাত উন্নয়নে পরীক্ষামূলক বেড ফেলা হয়েছে। চাষ করা হয়েছে তেজপাতা, দারচিনি, ছোট এলাচ, ধনিয়া, দই রঙ, লং, পান, শালুক, বিলাতি ধনিয়াসহ বিভিন্ন মসলা। গবেষণায় মসলার জাত উন্নয়ন হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছেন কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
বিশ্বে ১০৯ প্রকার মসলা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ২৭ প্রকার মসলা ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে দেশে চাষ হয় ২০ প্রকার মসলার। দেশে ৪ দশমিক ৭৭ লাখ হেক্টর জমিতে মসলা চাষ হয়। এ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৪ দশমিক ৭ টন ফলন পাওয়া যায়। দেশে মসলার বার্ষিক চাহিদা ৩১ দশমিক ৫৪ লাখ টন। সে হিসাবে মসলার ঘাটতি ৭ দশমিক ৪৮ লাখ টন। এভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারলে উন্নত জাত উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেএম খালেকুজ্জামান জানান, এ কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ১৪টি মসলার ৩১টি জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করা হয়েছে। আরো কিছু জাত উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম