কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ হাইব্রিড কৈ মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ মাছ খেয়ে অসংখ্য মানুষ নীরবে লিভার ও কিডনি সমস্যাসহ ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ তা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বরাবরই উদাসীন। চিকিৎসকরা জানান, হাইব্রিড কৈ মাছ চাষে নাইট্রোফ্লোরাম, ফ্লোবাল ফাইটালসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া মাছ বড় হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হরমোন প্রয়োগ করা হয়। হরমোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পিটুইটারি গ্রান (পিজি), যা মানুষের স্বাস্থ্যর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং মেডিসিন ও স্বায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রিয়তোষ চন্দ্র দাস বলেন, এসব অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোনে বেড়ে ওঠা মাছ নিয়মিত খেলে মানুষের লিভার, কিডনি সমস্যাসহ ক্যান্সারের মতো বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। মৎস্য অধিপ্তরের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাইব্রিড কৈয়ে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোন ব্যবহার করা হয় না, তা সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রিজারভেটিভও ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হৃদরোগ বিশেষ ডা. আ ফ ম সাইদুর রহমান জানান, প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করে এমন মাছ খাওয়া শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইব্রিড কৈ মাছে এসব অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোন ছাড়াও খাবার হিসেবে ট্যানারি বর্জ্য, মনুষ্য বর্জ্য, নর্দমা ও ড্রেনের ময়লাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনা অফিসার খন্দকার সরফদারের কাছে এ মাছের খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইব্রিড কৈ মাছের খাবারের তালিকায় আছে ছোট মাছ, চিংড়ি মাছ, গমের ভুসি, চালের মিহি গুড়া, চালের খুদ, আটা, সড়িষার খৈল, তিলের খৈল, সোয়াবিন, ভুট্টা চূর্ণ উদ্ভিদজাত, ফিশমিল ইত্যাদি। এসব খাদ্য দিয়ে এ মাছ বড় করলে তাতে পুষ্টি ও গুণাগুণসহ আমিষের পরিমাণ ঠিক থাকে।
মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর শাকুর আরও বলেন, কৈ মাছ পরিষ্কার পানিতে চাষ না করে ময়লা-আবর্জনা, ডোবা বা খালে চাষ করা হচ্ছে, যা মাছের স্বাভাবিক পুষ্টিমান নষ্ট করছে। যেসব হ্যাচারির পানি পরিষ্কার, পুকুরের পানি ভালো ও খাবার ভালো দেয় সেসব মাছ খেলে কোনো সমস্যা নেই। মৎস্য বিভাগের আরেক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন রতন বলেন, কোনো হাইব্রিড মাছেই প্রকৃতি থেকে পাওয়া মাছের পুষ্টিগুণ থাকে না । এ মাছ খেলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, যদি না মাছ চাষের সময় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
মৎস্য বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, যে মাছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় সেসব মাছে আমিষের পরিমাণ কমে যায়। যা পুষ্টিগুণ আছে তা নষ্ট করে দেয়। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, কৈ মাছ উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের বিষ্ঠা, পয়ঃনিষ্কাশনের মাঝে মাছ চাষ এবং তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হরমোন প্রয়োগ করা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
হ্যাচারির কিছু অসৎ মালিক ও ব্যবসায়ী অল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় মাছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করে থাকেন। যেসব মাছ ব্যবসায়ী, অসাধু চক্র এসব কাজ করে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক সভা-সেমিনারেরও আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী অতি মুনাফালোভী হওয়ার কারণে মাছে এ সকল কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এর পরিমাণ এখনো আহামরি বাড়েনি, নাগালের ভেতরই আছে। এসব অসৎ হ্যাচারির প্রত্যেক মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি সচেতনও হতে হবে।
সুত্রঃ যায়যায় দিন/ কৃপ্র/এম ইসলাম