এম আব্দুল মোমিন: মাশরুম হলো এক প্রকার মৃতজীবী ছত্রাক। মাশরুমের আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের সমন্বিত উপাদান আছে। যা শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’কে উন্নত করে। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত মাশরুম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম এবং অাঁশ বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার। মাশরুমে আছে শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাস্টেটিন এবং ইরিটাডেনিন। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে।
আশার খবর মাশরুমপ্রেমীদের জন্য চাষিবান্ধব সহজ চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে নিবিড় পরিশ্রম করে চলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি সম্প্রতি এমন এক মাশরুমের চাষিবান্ধব উৎপাদনে সমর্থ হয়েছেন যেটি দেখতে আকর্ষণীয় এবং পুষ্টিগুণে অনন্য। এই মাশরুমের নাম পমপম মাশরুম। এটি সারাবিশ্বে পরিচিত মূল্যবান ঔষধি মাশরুম। মস্তিষ্কের সুরক্ষা দেয় পমপম মাশরুম। আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল খায়েরের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি গবেষণা করছেন। তিনি জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সাবেক গবেষক এবং মাশরুম উদ্যোক্তা।
মূল্যবান এই মাশরুম উৎপাদন সম্পর্কে গবেষক আনোয়ার হোসেন জানান, পমপম মাশরুম একটি সেরা ঔষধি মাশরুম, মাশরুমটি মোটামুটি ক্যালরি মুক্ত এবং দেহ রোগমুক্ত রাখার জন্য প্রাকৃতিক প্রাণরাসায়নিক উপাদানে সমৃদ্ধ। মাশরুমটিতে রয়েছে বিটাগ্লুকান, হেটারো-গ্লুকান এবং হেরিসিনোন্স ও এরিনাসিন্স নামক জটিল প্রাণ রাসায়নিক উপাদান। চীন দেশে প্রায় শতাব্দীকাল ধরে মাশরুমটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মাশরুমটিতে রয়েছে পালমিটিক এসিড, থ্রেইটল এবং ডি-অ্যারাবিনোজ যা রক্তের চিনি ও কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাশরুমটি ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুর পুণর্গঠন ঘটায় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোর দ্রুত উন্নয়নে কাজ করে। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্রম হ্রাসের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে ফলে বৃদ্ধাবস্থায়ও এটি স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
মাশরুমটি উৎপাদন সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল খায়ের বলেন, ‘গবেষক আনোয়ার হোসেন সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমী মাশরুমের উৎপাদনে নিজের ব্যক্তিগত ফার্মে কাজ করে যাচ্ছেন, পমপম মাশরুম উৎপাদনে তার এই সফলতা অবশ্যই মাশরুম শিল্পের জন্য একটি বিশাল সুখবর। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাশরুমটির বার্ষিক উৎপাদন ২ মিলিয়ন মেট্রিকটন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম