কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জিংক সমৃদ্ধ ধানের পর কৃষিতে যুক্ত হয়েছে আয়রণ সমৃদ্ধ ধান। বিনাধান-১৯ নামের এ ধানের জাতটি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। এটি দেশে প্রচলিত ধানের জাতসমূহ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বেশি আয়রণ সমৃদ্ধ। শেরপুরে গত আমন মৌসুমে এ আয়রণ সমৃদ্ধ বিনাধান-১৯ পরীক্ষামূলক গবেষণা প্লটে আবাদ করে একর প্রতি ফলন মিলেছে ৫৫ মণ।
বিনাধান-১৯ দেখতে অনেকটা সরু এবং লম্বা, এর চাল বেশ পুষ্ট এবং লালচে। আমন মৌসুমে এক সঙ্গে লাগানো হলেও ব্রি ধান-৪৯ এর চাইতে অন্তত ১০ দিন আগে বিনাধান-১৯ ঘরে তোলা গেছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মধ্যে আয়রণ সমৃদ্ধ বিনাধান-১৯ নতুন আশাবাদের সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, শেরপুর এবং আরও দু’টি অঞ্চলে মাঠ গবেষণায় বিনাধান-১৯ এর ভালো ফলন মিলেছে। আমন মৌসুমে এ ধানটি একটি নতুন জাত হিসেবে অনুমোদনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে পাঠানো হবে। আশা করা যায়, আগামী দিনে আয়রণ সমৃদ্ধ বিনাধান-১৯ কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, পৃথিবীর শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ আয়রণ ঘাটতিজনিত নানা জটিলতায় ভুগে থাকে। এর ফলে গর্ভপাত, গর্ভবতী মা ও শিশু মৃত্যু হার বেড়ে যায়। এছাড়াও শিশুদের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাছাড়া অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হওয়াসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। একজন পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষের দৈনিক আয়রণের চাহিদা ২৮ মিলিগ্রাম এবং ৫০ কেজি ওজন বিশিষ্ট প্রসূতি ও দুগ্ধদানকারী নারীর দৈনিক চাহিদা ৩৫ মিলিগ্রাম। প্রচলিত ধানের জাতগুলোর ১০০ গ্রাম চালে আয়রণ থাকে শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম থেকে শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। ফলে হিসাব করলে দেখা যায়, গড়ে একজন মানুষ ৪৫৩ দশমিক ৪৫ গ্রাম থেকে ২ দশমিক ২৭ মিলিগ্রাম আয়রণ পেতে পারে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু বিনাধান-১৯ থেকে আয়রণ পাওয়া যাবে ১৪ দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম।
জাত উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানী বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিনাধান-৭ এর সঙ্গে ভিয়েতনামের উচ্চ আয়রণ সমৃদ্ধ ধানের শংকরায়ন ঘটিয়ে প্রস্তাবিত বিনাধান-১৯ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি অন্যান্য ধানের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আয়রণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম চালে ৩ দশমিক ১ মিলিগ্রাম আয়রণ রয়েছে। আমন মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫ টন থেকে সাড়ে ৫ টন এবং বোরো মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৭ থেকে সাড়ে ৭ টন করে ফলন হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ আয়রণ ঘাটতিজনিত রোগে ভোগে। তার মধ্যে গর্ভবতী নারীদের অকাল প্রসব, অনাকাঙ্খিত গর্ভপাত হওয়া এবং গর্ভজনিত কারণে শিশুমৃত্যু বেড়ে যাওয়া। বয়স্ক পুরুষদের আয়রণের ঘাটতির কারণে কর্মক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বিনাধান-১৯ এর ভাত খেলে আয়রণের ঘাটতি পূরণ হবে। এতে আমরা সুস্থ মা, সবল শিশু সর্বোপরি সুস্থ জাতি পাব।
নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসরিন আক্তার জানিয়েছেন, বিনাধান-১৯ জাতটির জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন। এটি ব্রি ধান-৪৯ এর ১০ দিন আগেই পেকে গেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম