কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নেত্রকোনা জেলায় শীতকালীন ফসল সরিষার এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক। সরিষার দাম ভালো থাকায় কৃষক সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন।জেলার কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা, কেন্দুয়া, আটপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর অনেক জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ওইসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় প্রতিটি কৃষক বাড়ির আশপাশের জমিতে কমবেশি সরিষা আবাদ করেছেন। নিচু এলাকা হওয়ায় এখানে বর্ষাকালে কোনো ফসল হয় না।
অক্টোবর, নভেম্বর মাসের দিকে বিলের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির পানি কমে গেলে লাঙ্গল বা ট্রাক্টর দিয়ে ২-৩টি চাষ দিয়ে অল্প দিনে সরিষা বপন করা হয়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে সরিষার আবাদ শেষ হয়। সরিষা আবাদে সার ও হাল চাষের খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। আগাছা বাছতে হয় না। বিলের জমিতে সেচের তেমন দরকার হয় না। কাঠা প্রতি ফলন হচ্ছে দেড় থেকে দুই মণ সরিষা। আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে। কাঠা প্রতি খরচ হচ্ছে পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। সরিষা চাষে অন্য ফসল করতে কোনো অসুবিধা হয় না, বরং জমির উর্বরতা বাড়ে বলে কৃষকরা বিশ্বাস করেন। কয়েকজন সরিষা চাষির অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা তাদের সরিষা চাষে উৎসাহ প্রদান করেন না। কৃষক স্বপ্রণোদিত হয়ে এ এলাকায় ২০-২৫ বছর ধরে সরিষার চাষ করে আসছেন ।
সদর উপজেলার কুমড়ি গ্রামের কৃষক ইন্নছ আলী বলেন, ‘সরিষা চাষের জন্য একদিনে এক কাঠা জমি তৈরি করা যায় এবং কাঠা প্রতি লাভ থাকে দুই হাজার টাকার মতো। সরকার ধানের দাম ৭২০ টাকা করে দিলেও আমরা ঠিকমতো দাম পাই না। আমাদের বেচতে হয় ৪৫০- ৫০০ টাকা মণ দরে। ধানের চেয়ে সরিষা চাষে লাভ বেশি।’ সদর উপজেলার মেদনী গ্রামের আবদুল মজিদ বলেন, ‘পাঁচ কাঠা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকার মতো। ধানের চেয়ে এতে বেশি লাভ হবে। সরকারি সাহায্য থাকলে সরিষা আবাদ বাড়ানো যেত।’ একই উপজেলার বাঘরুয়া গ্রামের এমরান শাহ ফকির বলেন, ‘ধান কইরা তেমন লাভ হয় না, খরচই ওঠে না। এবার বাড়ির সামনে কিছু জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। সরিষা আমাদের অনেক কাজে লাগে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছয় হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। জেলার কলমাকান্দা, পূর্বধলা, কেন্দুয়া, আটপাড়া, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, জেলায় সরিষার আবাদ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়তে পারে। কৃষকের দৃষ্টি আকষর্ণের জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম