কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া হাওর এলাকায় সড়কের পাশে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠেছে অবৈধ ইটভাটা। পাঁচ-ছয় বছর আগে গড়ে ওঠলেও ওই ইটভাটার নেই কোনো অনুমোদন। এতে এলাকার কৃষি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। উপজেলা প্রশাসন ও সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণে আইনগত নিষেধ থাকলেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লোপাড়া হাওরে প্রায় ৮ একর ফসলি জমিতে গড়ে ওঠেছে অবৈধ ইটভাটা। এর আশপাশে ফসলি জমির সমারোহ। চাষ করা হয়েছে ধানের পাশাপাশি আলু, মরিচ, ডালসহ বিভিন্ন রবিশস্য। গত পাঁচ বছর ধরে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে কাটা হচ্ছে ওই হাওরের ফসলি জমির উর্বর (টপ সয়েল) মাটি। বাদ পড়েনি সরকারি পতিত জমিও। ইটভাটার দখলে চলে গেছে লোপাড়া খালের একাংশ। এখানে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি রয়েছে শিশু শ্রমিকও।
কৃষি জমিতে গড়ে ওঠেছে অবৈধ ইটভাটা
সড়কের পাশেই রাখা হয়েছে মাটি ও জ্বালানি কয়লার স্তূপ। যন্ত্র দিয়ে সড়কের পাশে কয়লা ভাঙার সময় বিষাক্ত ধোঁয়া আর ধুলাবালিতে এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠে। এতে পরিবহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা নাক চেপে ধরেও নিস্তার পাচ্ছেন না।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় ফসলি জমিতে অবৈধ এ ইটভাটাটি গড়ে ওঠেছে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ইটভাটার আশপাশের বোরো ফসল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। গত মৌসুমে জমির ধান পাকা শুরু হলে কৃষকরা অধিক মাত্রায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। গত বছর প্রায় ৫০ একর জমির বোরো ধানে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সমাবেশসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ভ্রম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইটভাটার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন। কখা ছিল ফসলি জমি থেকে এটি সরিয়ে নেওয়া হবে, কিন্তু তা হয়নি।
লোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ইটভাটার ধুলা আর ধোঁয়ায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালিক পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।’ চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ইটভাটা চালাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, ‘কৃষি জমির পাশেই অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে ওঠেছে। ওই ইটভাটার কারণে এলাকার কৃষি আজ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কৃষি জমির পাশে ইটভাটা হতে পারে না।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন রাজিব বলেন, ‘ওই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এটি পরিবেশ বিপর্যয় করে কৃষকদের ক্ষতি করছে। শিগগির এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ইউএনও সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, ‘তদন্ত করে ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুত্রঃ ইত্তেফাক/ কৃপ্র/এম ইসলাম