কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত, শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মতো অবধারিত চ্যালেঞ্জও রয়েছে আমাদের। এমন বাস্তবতায় গবেষকরা অবিরতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে স্বল্পতম ব্যয়ে সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান সরকার নীতিগতভাবে এ বিষয়টির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে ‘ই-ভিলেজ’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য, ফসলের প্রকৃত রোগ যথাযথভাবে নিরূপণ করে বিদ্যমান উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করাই হবে এ প্রকল্পের প্রধানতম লক্ষ্য।
‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পটি অতীতের সীমাবদ্ধতাকে জয় করে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তির সনি্নবেশ ঘটাতে যাচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে একটি স্মার্ট অ্যাপ্স তৈরি করা হবে, যা বাংলায় সহজে কৃষকের ব্যবহারোপযোগী ও ছবিসহ হবে। একই সঙ্গে অডিও ভয়েসযুক্ত করা হবে। যার মাধ্যমে কৃষকরা তার জমি ও ফসলের কী অবস্থা তা জানতে পারবে। প্রকল্পের শুরুতে এটি সবজি ক্ষেতে সমীক্ষা চালানো হবে। ধীরে ধীরে তা অন্য ফসলে নিয়ে যাওয়া হবে। কৃষকরা সকালে হয়তো ফোন সেটটি ওপেন করলেই তাতে একটি বার্তা যাবে, যাতে নির্দেশনা থাকবে_ তার ক্ষেতের সবশেষ কী অবস্থা। একই সঙ্গে করণীয়ও জানিয়ে দেবে কী ধরনের ওষুধ, সার, পানি বা অন্যান্য উপকরণ দিতে হবে। যদি তারা বাড়ির বাইরেও থাকে, যাতে তার কাছে বার্তা যায় সে ব্যবস্থা থাকবে। কৃষকরা তাদের ক্ষেতের জটিল কোনো অবস্থাতেও কারও দ্বারস্থ না হয়ে নিজেই সমাধান করতে পারবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু ডিভাইস উদ্ভাবন করা হবে স্থানীয় আবহাওয়া ও অন্যান্য উপযোগিতা বিবেচনায় নিয়ে। কিছু ডিভাইস সচরাচর পাওয়া যায় বিশ্বজুড়ে, কিন্তু তা খুবই ব্যয়বহুল। যেমন ফিল্ড সার্ভার ৭-৮ লাখ টাকা দাম। তারপরও এটা দিয়ে কেবল এক ধরনের ডাটা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের পক্ষে তো এত দাম দিয়ে তা কেনা সম্ভব নয়। আমরা এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সাশ্রয়ী ডিভাইস নিয়ে আসব, যা কৃষকের সামর্থ্যের নাগালে থাকবে। যাতে একজন বা একাধিক কৃষক মিলে ওই ডিভাইসটি কিনতে পারে। এই ডিভাইসটি নিজ থেকে পিএইচ লেভেল বলে দেবে, ক্ষতিকারক পোকামাকড় আছে কি-না তাও বলে দেবে।
এই ডাটা চলে আসবে সার্ভারে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ-সুবিন্যাস করে সফটওয়্যার উন্নয়ন করে তা অ্যাপ্সে দেবেন। কৃষিবিদরা ডাটা বিশ্লেষণগুলো করে যথাযথ পরামর্শটা অ্যাপ্সে যুক্ত করবেন। কৃষকদের কাছে অ্যাপ্স-এর মাধ্যমে সরাসরি পরামর্শ চলে যাবে। এ প্রকল্প সফল হলে ফসলের ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। কারণ রোগবালাইসহ অন্যান্য সমস্যা যথাসময়ে চিহ্নিতকরণ ও যথাসময়ে তার প্রতিকার করা যাবে। অপরদিকে, উপাদান ব্যয়ও ২০ ভাগ কমবে। এটি আশা করা যায়, কৃষকরা ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ ভাগ লাভবান হবে। প্রকল্পটির এই প্রত্যাশ্যা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হয়, সে জন্য টানা ৬ মাস এ নিয়ে গবেষণা চলবে। বাকি সময়ে অন্যান্য বিষয় সম্পন্ন হবে।সামগ্রিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে তা হবে আরও এক ধাপ অগ্রগতি।
‘ক্রিয়েটিং ই-ভিলেজ ইউজিং স্মার্ট টেকনোলজি’ নামের এ প্রকল্পের পাইলট পর্বে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করতে তাদের প্রশিক্ষিতও করা হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে ই-ভিলেজ পণ্য বিক্রি করতে পারবে। চীনা দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে আইসফটস্টোন, চায়না।
আজ ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। ই-ভিলেজ প্রকল্প বিষয়ে আইসফস্টোন-এর মহাব্যবস্থাপক ফেরহক ওয়াল্টার বলেন, চীন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ই-ভিলেজ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং আধুনিক রূপান্তর সম্ভব। কৃষি অর্থনীতির গতানুগতিক হিসাবনিকাশ পাল্টে দিতে পারে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চাষাবাদ ও বিপণন প্রক্রিয়া। প্রজেক্ট ইনভেস্টিগেটর, ই-ভিলেজ; সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃপ্র/এম ইসলাম