এস এম মুকুল ও এম এ মোমিন: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০১৩ সালের সর্বশেষ আলুর উৎপাদন-বিষয়ক পরিসংখ্যান বলছে, আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন এবং কৃষকদের প্রচেষ্টায় আলু চাষের সফলতা এসেছে। মূলত ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশে আলু উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে। ইউরোপে যেখানে আলু পরিণত হতে পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগে, সেখানে বাংলাদেশে আলু হতে তিন মাস লাগে। গত একযুগে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা ৭৩টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আলুর নতুন জাত উদ্ভাবনে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত জাতগুলো থেকে দেশের ৭৫ শতাংশ আলু উৎপাদিত হচ্ছে বলে বারি থেকে জানানো হয়েছে। বারি আলু-৪৬ ও বারি আলু-৫৩ নামে নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন আলু গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা, যাতে ব্যাকটেরিয়া (লেট বস্নাইট) আক্রমণ হবে না।
আলুর জনপ্রিয় জাতগুলো
বিশ্বে কয়েকশ জাতের আলু চাষ হয়। এগুলোর পার্থক্য বাহ্যিকরূপ, কন্দের গঠন, আকার ও বর্ণ, পরিপক্বতার সময়, রান্না ও বাজারজাতকরণ গুণাবলি, ফলন এবং রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতায়। একটি এলাকার জন্য উপযোগী একটি জাত অন্য এলাকায় উপযোগী নাও হতে পারে। বাংলাদেশে চাষকৃত আলুর জাতগুলোকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়, যেমন স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল (উফশী)।
দেশের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় আলুর প্রায় ২৭টি জাত আবাদ করা হয়। এগুলোর পরিচিত স্থানীয় নাম রয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পরিচিত স্থানীয় জাতগুলো হচ্ছে (ক) শীলবিলাতী যা প্রধানত রংপুরে চাষ করা হয়। এর কন্দ আয়তাকার ও লালচে। প্রতি কন্দের ওজন প্রায় ৩০ গ্রাম। (খ) লালশীল প্রধানত বগুড়ায় চাষ করা হয়। এর কন্দ গোলাকৃতির, লালচে, প্রত্যেকটির ওজন হয় প্রায় ৫৫ গ্রাম। এ জাতটি লালমাদ্যা বা বোগরাই নামেও পরিচিত। (গ) লালপাকরী দিনাজপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় যার কন্দ লালচে, গোলাকার, প্রত্যেকটির ওজন প্রায় ৩০ গ্রাম। (ঘ) দোহাজারী- প্রধানত চট্টগ্রাম এলাকায় চাষ হয়। দেখতে গোলাকার ও ফ্যাকাসে, প্রত্যেকটির ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম। অন্যান্য দেশি জাতগুলোর মধ্যে ঝাউবিলাতী ও সূর্যমুখী উল্লেখযোগ্য। উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উন্নত জাতগুলোর মধ্যে আছে পেট্রোনিস, মুলটা, হীরা, মরিন, ওরিগো, আইলসা, গ্রানুলা, ফেলসিনা, রাজা, ডুরা, অ্যাস্টারিক্স প্রভৃতি।
কৃপ্র/ এম ইসলাম