কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বকফুল এর ইংরেজি নাম Sesbania grandiflora। উদ্ভিদতাত্তি্ক নাম Sesbania grandiflora । মাঝারি আকারের ঝাড়জাতীয় বৃক্ষ। ফুলের আকার-আকৃতি গাছের ডালে বকের ঠোঁটের মতো বোঁটায় ঝুলে থাকতে দেখায় বলে এ ফুলের নামকরণ করা হয়েছে। বকফুল তিন রঙের দেখা যায়, সাদা রঙের, লাল রঙের ও গোলাপি রঙের। বাংলাদেশে সাদা ও লাল রঙের বকফুল বেশি পাওয়া যায়। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। বীজ থেকে চারা তৈরি করে বংশ বিস্তার করা যায়।
বীজ থেকে সহজে চারা হয়। শরৎ-হেমন্তে ফোটা ফুলের বীজ হয় বসন্তে। তখন বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করা যায়। বীজ গাছ থেকে সংগ্রহের পর দ্রুত বীজ সজীবতা হারাতে থাকে। তাই সংগ্রহের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজ মাটিতে বুনে দেয়া ভাল। গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল চারা লাগাানোর ভাল সময়। আষাঢ মাসে লাগানো গাছে ঠিকমত যতœ নিলে কার্তিক মাস থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে। বীজ ছাড়া বয়স্ক ডাল কেটে লাগালে তা বেঁচে যায়। বীজতলায় তৈরি করা চারা ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়স হলেই সেগুলো তুলে মূল জায়গায় লাগানো যায়। সারি করে ২ মিটার দূরে দূরে চারা লাগানো যায়। লাগানোর আগে সবদিকে ৩০ সেন্টিমিটার মাপের গর্ত করে গর্তের মাটিতে শুধু জৈব সার মিশিয়ে চারা লাগাতে হয়। কম উর্বর মাটিতেও গাছ হয়। সেজন্য রাসায়নিক সার না দিলেও চলে। চারা না তুলে সরাসরি বীজ বুনে সেখানে রেখেও গাছ তৈরি করা যায়। লাগানোর ৯ মাসের মধ্যেই গাছের উচ্চতা ৫-৬ মিটার হয়ে যায়। গাছ যদিও প্রায় ২০ বছর বাঁচে, তবু ভাল ফলনের জন্য অতদিন রাখা ঠিক নয়। প্রতি ৩ বছর পরপর নতুন গাছ লাগালে ভাল হয়। বর্ষাকালে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়। সেচ পেলে গাছ বাড়ে।
বকফুল গাছের প্রতিটি অংশই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জ্বর, ফোলা ও ব্যাথা সারাতে এ গাছের মূল ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথায় শিকড় চূর্ণ জলের সাথে গুলে ব্যাথা জায়গায় ঘষলে, লাগালে বা প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। বাকল বসন্ত রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। ফিলিপিনে গাছের বাকল মুখের আলসার সারাতে ব্যবহার করা হয়। চুলকানি-পাঁচড়া সারাতে কম্বোডিয়ায় বাকল চূর্ণ লাগানো হয়। কৃমি ও জ্বর সারাতে পাতার রস খাওয়ানো হয়।
বকফুল সবজি হিসেবে অতি উত্তম, মুখরোচক, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ফুল। বকফুলের বড়া, ভাজি, সবজি রান্না করে খাওয়া যায়। বকফুলে বিদ্যমান রয়েছে, প্রোটিন, চর্বি, খনিজ লবণ, হজমযোগ্য অাঁশ, ভিটামিন-ডি, আয়োডিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-সি। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দাঁত ও হাড় মজবুত করে, রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, খাদ্যনালির ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ও আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে বকফুল সহায়ক।
কৃপ্র/এম ইসলাম