কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টার্কি আমেরিকার আবাসিক পাখি হলেও টার্কি পালন বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খাবার হিসেবে চাহিদা বাড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠছে। এসব খামারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অনেকে স্বনির্ভর হয়েছেন। এদেরই একজন ফেনীর পরশুরামের আজমীর হোসেন জুয়েল। দুই বছর আগে টার্কি লালন-পালন শুরু করে এখন তিনি কোটিপতি। স্থানীয়ভাবে তাকে সবাই টার্কি জুয়েল নামে ডাকে।
জানা যায়, পরশুরাম উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল আগে মাছ ও মুরগির খাবারের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এতে প্রয়োজন মেটাতে পারলেও তার পরিবারে সচ্ছলতা ছিল না। ২০১৫ সালে তিনি নিজের ১৬ শতক জমির ওপর আল্লাহর দান নামে টার্কির একটি খামার গড়ে তোলেন। ২০০টি বাচ্চা দিয়ে শুরু করলেও এখন তার খামারে এক হাজারের বেশি টার্কি রয়েছে। টার্কি বিক্রির পাশাপাশি এখানে ডিম থেকে বাচ্চা উত্পাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশ-বিদেশে তার খামার টার্কি ও বাচ্চার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। অনেকেই আচার-অনুষ্ঠান বা ঘরোয়াভাবে খাওয়ার জন্য শখ করে নিয়ে যান এ পাখি।
এখন তাকে সবাই ‘টার্কি জুয়েল’ নামেই ডাকে। টার্কি পালন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন তিনি। টার্কি ছাড়াও তিতির, কোয়েল পাখি, বিভিন্ন জাতের বিদেশী কবুতরের খামারও গড়ে তুলেছেন জুয়েল। জুয়েলের টার্কি খামার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কথা হলো আবদুর রহমান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি মুন্সীগঞ্জ থেকে টার্কি কিনতে এসেছেন।
তিনি জানান, তার মামাশ্বশুর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ খামারের কার্যক্রম জানতে পেরে এখান থেকে টার্কি সংগ্রহ করতে অনুরোধ জানান। তাই তিনি এ খামার থেকে টার্কি নিয়ে যেতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা দরে ছয়টি টার্কি কিনেছি। সব মিলিয়ে ওজন হয়েছে ১৪৭ কেজি।’ খামারের কর্মীরা জানালেন, এভাবে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টার্কি কিনতে আসেন শৌখিন ক্রেতারা। তাদের কাছে দাম যা-ই হোক, টার্কি পাওয়া গেছে এটাই বড় বিষয়। জুয়েল জানান, টার্কি একটানা ২২টি পর্যন্ত ডিম দেয়। তার ভাই আবদুল হালিম নিজেই হ্যাচারি মেশিন তৈরি করেছেন। মেশিনে ডিম রাখার ২৮ দিন পর বাচ্চা ফুটে। এ হ্যাচারি মেশিনে দৈনিক ৫০টি বাচ্চা উত্পাদন হয়।
তিনি জানান, টার্কি দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমি শাক, বাঁধাকপি ও সবজি-জাতীয় খাবার খায়। চার মাস পর থেকে প্রতিটি টার্কি খাওয়ার উপযোগী হয়। ছয় মাসে এ পাখির ওজন ছয় থেকে সাত কেজি পর্যন্ত হয়। ঠিকভাবে লালন-পালন করা গেলে টার্কির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। তার খামারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হয় প্রায় ৮০০ টাকায়। এক মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি হয় জোড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। তার খামার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা এসে বাচ্চা নিয়ে যান। এছাড়া বিদেশেও কয়েক দফায় বাচ্চা রফতানি করেছেন।
জুয়েল বলেন, উত্তর আমেরিকা টার্কির উত্পত্তিস্থল। ১৭০০ সালে যুক্তরাজ্যে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এ পাখির নতুন জাত উত্পাদন করা হয়। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ পাখি পালন করা হচ্ছে। টার্কির স্বাদ অনেকটা খাসির মাংসের মতো। মাংসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও চর্বি কম থাকায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে জুয়েলের সম্পদ বলতে ছিল শুধু পৈতৃক ভিটাই। টার্কি লালন-পালন শুরুর পর থেকে তিনি আশপাশে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জমি কিনেছেন। তাকে দেখে অনেকেই এখন টার্কি পালনে উত্সাহী হয়ে উঠছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু আল মানছুর জানান, টার্কি এখনো মুরগি হিসেবে স্বীকৃত নয়। এটি মূলত এক ধরনের পাখি। এ পাখির রোগব্যাধি কম হওয়ায় অল্প খরচে ও কম সময়ে ভালো লাভ হয়। ফেনীর পরশুরামে এ পাখির খামার গড়ে তুলে ভালো মুনাফা করেছেন জুয়েল। অন্য কেউ এ পাখির খামার গড়ে তুলতে চাইলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম