কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ‘সবুজ পৃথিবী গড়তে শিক্ষাজীবনে অন্তত একটি করে গাছের চারা লাগাও’ এ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাড়ে তিন লাখ গাছের চারা রোপণ করেছে ত্রিশালের শিক্ষার্থীরা। এ কাজে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন ত্রিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু জাফর রিপন। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যার কাজ ছিল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকারি কার্য সম্পাদন। কিন্তু একজন সচেতন ও মননশীল নাগরিক হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিয়েছেন আরো বিস্তৃত পরিসরে। তার উদ্যোগে গড়ে ওঠা সবুজ ত্রিশাল এখন সারা দেশের জন্য একটি মডেল।
পাঁচ লাখ মানুষের এলাকা ত্রিশাল। এ এক উপজেলায় আবু জাফর বিতরণ করেছেন সাড়ে তিন লাখ গাছের চারা। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। এসব গাছের চারা ঠিকমতো রোপণ করা হলো কিনা, সেসব বিষয়ে করেছেন তদারকি। এখন ত্রিশালের প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী একটি করে গাছের মালিক। প্রায় প্রতিটি পরিবারের কাছে একটি করে গাছের চারা দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রশাসন চাইলে অন্য রকম পরিবর্তনও সম্ভব।
‘সবুজ ত্রিশাল’ পরিকল্পনার আওতায় উপজেলাটিতে ছয় মাস আগে এ কর্মসূচি শুরু করেন আবু জাফর। শুরুতে উপজেলা পরিষদে প্রায় ২৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে সভা করেন তিনি। সেখানে সবুজায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে সবিস্তারে তুলে ধরেন। উপস্থাপন করেন সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার এক স্বাপ্নিক উদ্যোগ। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নেন। তার এ কাণ্ডারি নির্বাচন যে পুরো মাত্রায় সফল ছিল, তা পরবর্তী ঘটনাপঞ্জিই বলে দেয়। এ সাফল্য এরই মধ্যে পেয়েছে জাতীয় স্বীকৃতি। আবু জাফর এরই মধ্যে মডেল ইউএনও হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ঝুলিতে জমা হয়েছে বেশকিছু পুরস্কার।
এক উপজেলায় একই সঙ্গে এত সংখ্যক গাছ রোপণে সাফল্যের কারণে আবু জাফরকে এরই মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) ইনোভেটর (উদ্ভাবক) হিসেবে জেলা প্রশাসক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। ময়মনসিংহ বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইউএনও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই সোস্যাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০১৬তে ভূষিত হয়েছেন তিনি। সবশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
শুধু পুরস্কার নয়। তার এ কার্যক্রম এরই মধ্যে মডেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় ইনোভেশন সার্কেলে রিসোর্স পারসন হিসেবে ‘সবুজ ত্রিশাল’ কার্যক্রম উপস্থাপনের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে। খুলনা বিভাগে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার কাছে চাওয়া হয়েছে সহযোগিতা। একইভাবে রংপুর বিভাগেও এ কার্যক্রমের ভিডিও মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানেও এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে হলে গাছের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ইউএনও আবু জাফর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গাছ ছাড়া স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গাছ। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েই এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এতে এ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরাও উত্সাহী হন। প্রত্যেক শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে অন্তত একটি করে গাছ লাগালে পরিবেশ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
ছয় মাস আগে শুরু করা এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ মসৃণ ছিল না কোনোমতেই। এজন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল ইউএনও আবু জাফরকে। শুরুতে তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্রিশালের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা নির্ণয় করেন। সে অনুযায়ী ত্রিশালের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যার সমান সংখ্যক গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলার ২৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৫০ হাজার গাছের চারা বিতরণের লক্ষ্য নেন ইউএনও। এ গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে মেহগনি, হরীতকী, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম