কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চীন ও কাতার থেকে আমদানিকৃত নিন্মমানের জমাটবাঁধা ইউরিয়া সার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। গত কয়েকদিন ধরে চাঁদপুরের ডিলার ও সাব ডিলারদের কাছে সরবরাহকৃত ওইসব সার এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ সুযোগে কিছু ডিলার অবৈধভাবে অন্য জেলা থেকে চিকন দানার ইউরিয়া সার আমদানি করে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন ইউনিয়নে বিক্রি করছে। এতে করে লাখ লাখ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছে চাঁদপুরের শতাধিক ডিলার।
এছাড়াও চাঁদপুরে সরকারি নিয়মের বাইরে এক ইউনিয়নের ডিলার ও সাব ডিলাররা অন্য ইউনিয়নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পেতে দেদারছে সার বিক্রি করছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি ডিলারের বাইরেও অন্য ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে সার বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। বিষয়গুলো একাধিকবার চাঁদপুর কৃষি বিভাগকে অবহিত করা সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বৈধ ডিলাররা।
অবৈধ সার বিক্রেতারা হলেন সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদিনা মার্কেটের বাবুল গাজী, দেলোয়ার মাস্টার, আবদুল হাই, আবুল বাশার, মো. সফিক, বালিয়া ফরাক্কাবাদ এলাকার আহসান মুন্সি, মুরাদ হোসেন, মহামায়া বাজারের আ. হক ট্রেডার্স, হাইমচরের রশিদ কোতোয়াল, ফরিদগঞ্জের গোয়ালভাওর এলাকার খোকন, রিপনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে আরও অনেকে।
জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈধ-অবৈধ সার বিক্রেতারা অন্য জেলা থেকে চিকন দানার ইউরিয়া সার ক্রয় করে চাঁদপুরে বিক্রি করছে। তারা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৮০০ টাকা বস্তার সার ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করছে। কৃষকরাও চাঁদপুরে সরবরাহকৃত মোটাদানা ও জমাটবাঁধা সার না কিনে বেশি দামে ওই চিকন সার ভালো ফসলের আশায় নির্বিঘ্নে কিনে নিচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন ওই ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অপরদিকে চাঁদপুরের শতাধিক ডিলার জমাটবাঁধা সারে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণছে। এ নিয়ে স্থানীয় ডিলাররা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের ডিলার গাজী ট্রেডার্সের সোহাগ গাজী জানান, আমি সরকার অনুমোদিত ডিলার। আজ ৫ বছর ধরে সারের ব্যবসা করে আসছি। এলাকাভিত্তিক দোকান হওয়ায় কৃষকদের কাছে কয়েক লাখ টাকা পাওনা রয়েছি। আমার প্রতিষ্ঠানের আশপাশে অনেকগুলো অবৈধ দোকান থাকায় আমার ব্যবসায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। এসব দোকানি বিভিন্নস্থান থেকে আমদানি করা অবৈধ সার বিক্রি করে যাচ্ছে। কৃষকরা এসব সার কিনে প্রতারিত হচ্ছে। পাশাপাশি আমরাও সরকারের বরাদ্দকৃত সার বিক্রি করতে পারছিনা।
জানা গেছে, হানারচর ইউনিয়নের সাব ডিলার দেলোয়ার মাস্টার অবৈধভাবে চান্দ্রা ইউনিয়নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সার বিক্রি করছেন। খবর পেয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাটওয়ারি এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৪০ বস্তা কাতারের সারের বস্তা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি হানারচরের সাব ডিলার স্বীকার করে বলেন, আমার মতো এরকম আরও অনেক অবৈধ ব্যবসায়ী রয়েছে। আপনারা তাদের গিয়ে আগে সর্তক করেন।
এদিকে নিন্মমানের ইউরিয়া সার প্রসঙ্গে চাঁদপুরের সার ব্যবসায়ী সমিতি ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, চীন থেকে থেকে আমদানিকৃত নিন্মমানের সারের বিষয়ে ইতোমধ্যে বিসিসিআই চেয়ারম্যান, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এছাড়াও অবৈধ সার ব্যবসায়ী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলায় আমরা ১০৬ জন ডিলার রয়েছি, এর বাইরে কেউ সার বিক্রি করলে অবশ্যই তা অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুরের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী আহম্মদ বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সভা করে অবৈধ সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, এ বছর আমদানিকৃত ইউরিয়া সারের মধ্যে কয়েক বস্তা সার একটু শক্ত ও ধুসর বর্ণের হওয়ায় চাঁদপুরের ডিলার ও কৃষকরা একটু সমস্যায় পড়েছেন। তবে এ সারে ফসলের কোন ক্ষতি হবার আশঙ্কা নেই।
সুত্রঃ দৈনিক সংবাদ / কৃপ্র/এম ইসলাম