প্রতিক্ষন ডেস্ক : মানিকগঞ্জের কাঁচামরিচ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সৌদি আর কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। জেলার ঐতিহ্যবাহী বরংগাইল, ঝিটকা ও ঘিওরসহ বিভিন্ন হাট থেকে প্রতিদিন শত শত মণ মরিচ প্যাকেটজাত করে পাঠানো হচ্ছে ওইসব দেশে। তবে বিদেশে মরিচ পাঠিয়ে রপ্তানিকারকরা লাভবান হলেও উৎপাদনকারী মরিচ চাষিরা লাভ গুনতে পারছেন না। সরজমিন মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বরংগাইল হাটে গিয়ে দেখা যায়, মরিচ কেনাবেচার ধুম।
প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসলেও মরিচ বেচাকেনা হচ্ছে সপ্তাহ জুড়েই। গত দেড় মাসের অধিক সময় ধরে এখানে প্রতিদিন মরিচের আড়ত বসছে। এই হাটে ঢাকার পাইকাররা এসে শত শত মণ মরিচ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার কাওরানবাজার, বকশীবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছে। এছাড়া, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই হাট থেকে উন্নতমানের মরিচ প্যাকেটজাত করে রপ্তানি করা হচ্ছে সৌদি, কুয়েত, দাম্মাম, রিয়াদসহ বিভিন্ন দেশে। চলতি মৌসুমের শুরুতে এই হাটে মরিচ বিক্রি হয়েছিল মাত্র ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে। মাঝে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হলেও বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, বিদেশে এসব মরিচ চড়া দামে বিক্রি হলেও উৎপাদনকারী কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। এক ধরনের মুনাফা লোভী মধ্যস্বত্বভোগী কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কিনে অধিক দামে বিদেশে রপ্তানি করছে। কৃষি বিভাগ কিংবা সরকারের সঠিক কোনো নিয়ম-নীতি না থাকার কারণেই কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
শিবালয় উপজেলার দুবুলিয়া গ্রামের কৃষক দলিল উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই তিনি তার জমিতে মরিচের চাষাবাদ করে আসছেন। এবার মরিচের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু লাভের দেখা মিলেনি। বর্তমানে মরিচ বিক্রি করতে হয়েছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে। ক্ষেত থেকে এক কেজি মরিচ তুলতে ৬ টাকা দিতে হয়। এছাড়া বীজ, কামলা, সার, পরিবহন ভাড়াসহ উৎপাদন খরচ দিয়ে লাভের দেখা মিলে না। সরকারিভাবে মরিচের একটা দাম নির্ধারণ করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পেতো বলে তিনি জানান।
বরংগাইল হাটের আড়তদার মো. ফরমান আলী বলেন, মানিকগঞ্জের কাঁচামরিচ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। এখান থেকে কার্টন ভর্তি করে মরিচ বিদেশে রপ্তানি হয় । তবে এবার কৃষকের পাশাপাশি আমরাও লাভের মুখ দেখছি না।
ব্যবসায়ী জসিম মিয়া জানান, জেলার শিবালয়, হরিরামপুর ও ঘিওর উপজেলা মরিচ চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিন্দু জাতের মরিচের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ মরিচ বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো বেশি মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া জানান, জেলায় এ বছর মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৭০৯ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। উর্বর মাটির কারণে এ জেলায় মরিচের আবাদ হয় বেশি, ফলনও ভালো। এ জেলা থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম