কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন, শশীভূষণ ও দক্ষিণ আইচা থানায় তিনদিনের সামুদ্রিক লঘুচাপ ও শিলাবৃষ্টিতে ৪৫০ হেক্টর জমির তরমুজ ও কাঁচা মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও মৌসুমের প্রথম শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মুখ মলিন হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলার জিন্নাগড়, আসলামপুর, নীলকমল, নূরাবাদ, রসুলপুর, চর মানিকা ও মুজিবনগর ইউনিয়নের প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ এবং ৯শ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। কিন্তু গত তিনদিনের সামুদ্রিক লঘুচাপ ও শিলাবৃষ্টিতে এবং শনিবারের ভারী বর্ষণে এ দুই ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চাষিরা জানিয়েছে, গত বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছর আরো বেশি জমিতে আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ফলন তোলার আগেই শিলাবৃষ্টিতে ক্ষেতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। অনেকেই এনজিও ও স্থানীয় মহাজন থেকে ঋণ নিয়ে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ শিকদার বলেন, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত তরমুজ চাষিদের ছত্রাকনাশক দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত গাছ ও পাতা তুলে ফেলতে বলা হয়েছে এবং দ্রুত পানি সেচ দিয়ে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে পরে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতে পারে। তবে এতে কৃষকের পুরো ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে না বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান।
কুমিল্লায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ভারী বর্ষণে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনায় কৃষকদের ফসলি মাঠ পানিবন্দী হয়ে গেছে। জেলার চান্দিনা-দেবিদ্বারসহ বিভিন্ন উপজেলায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকদের সৃজিত আলু, মুলা, ফুল কপি, বাঁধা কপিসহ নানা শাক-সবজি। পানিবন্দী হয়ে আছে কৃষকদের সৃজিত টমেটো, করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ক্ষেত।
দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাগুর গ্রামের সৌখিন চাষি লিটন সরকার জানান, অনেক শখ করে করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, টমেটো, ক্যাপসিকাম ও পালং শাক সৃজন করেছি। সবেমাত্র বসন্ত শুরু, সেজন্য পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনও বোধ করিনি। কিন্তু হঠাত্ প্রবল বর্ষণ হওয়ায় সকল শাক-সবজি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ২৪ শতাংশ জমিতে ধনে পাতা ও ২৪ শতাংশ জমিতে করলা সৃজন করেছি। শুক্রবারের ভারী বর্ষণে সব জমি তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে সেচ পাম্প দিয়ে জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করছি রাতে আবারও ভারী বর্ষণে ফের তলিয়ে যায়।
উপজেলার রারিরচর গ্রামের কৃষক আব্দুল অদুদ জানান, আমার প্রায় এক একর জমিতে আলু রয়ে গেছে। ভারি বর্ষণে পুরো আলু ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে আছে। কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আগামী এক সপ্তাহেও ওই আলু উত্তোলন করা সম্ভব হবে না। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চার দিনের প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে গত ৮ মার্চ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত মীর্জাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী উপজেলার মুগ, মিষ্টি আলু, চিনা বাদাম, ক্ষিরাই, তিল, মরিচ, পিঁয়াজ, রোশন ও খেসারি ফসলের আওতায় পাঁচ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির কোনো কোনো ফসলের শতকরা ২৫ ভাগ এবং কোনো কোনো ফসলের শতকরা ১০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান আবহাওয়াগত অবস্থার অবনতি না ঘটলে এবং ফসলের জমি থেকে পানি অপসারণ করা গেলে ফসলহানির পরিমাণ কম হবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম