কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ এক সময় গ্রামের পুরুষরা মাঠে কাজ করত আর নারীরা ঘরকন্নার পাশাপাশি কৃষিকাজে পুরুষের সঙ্গে সহায়ক ভূমিকা পালন করত। বর্তামানে দেশের অনেক জায়গায় প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছেন নারীরা । বিশেষ করে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় নারী শ্রমিকরা কৃষিকাজে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষিকাজে নারীর এ অংশগ্রহণ নারীকে স্বাবলম্বী করে তুলছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। পুরুষের পাশাপাশি মাঠে কাজ করে যাচ্ছে দল বেঁধে। স্বামী সন্তানের পাশাপাশি জীবনের ভাগ্য তথা দেশের উন্নয়নের জন্য দল বেঁধে মাঠে কাজ করছে তারা। সংসার জীবন, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলমান সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে। চরম কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে পুরুষকে সহযোগিতা করছে। ঘরে-বাইরে সমভাবে এগিয়ে এসেছে নারী। একটি সুন্দর স্বাবলম্বী সংসার নির্মাণে নারীর এই উদ্যোগ সময়ের দাবি।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমিতে নারীরা কাজ করছে। বিশেষ করে দরিদ্র, অভাবী, নারীরা পুরুষের পাশাপাশি মাঠে শ্রম বিক্রি করছে। গ্রামের নারীরা গৃহিণী হিসেবে চার দেয়ালের মাঝে সংসারের কাজকর্ম করে আসছিলেন। সংসারের ব্যয়ভার বহনে পুরুষরা একা পেরে উঠতে না পারায় সম্প্রতি নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বর্তমানে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ২শ ২০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হচ্ছে এবং ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। আর ওই সব ফসলি জমিতে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করছে। ভূমিহীন পরিবারের পুরুষ শ্রমিকরা রিকশা-ভ্যান ও বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন জেলায় রুজিরোজগারের জন্য চলে যায়। ফলে সংসারের খরচ চালানোর জন্য নারী শ্রমিকরা শ্রম বিক্রি করছে।
উপজেলা ৫টি ইউনিয়নে আনুমানিক ১ হাজার নারী শ্রমিক শ্রম বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা হাজিরায় শ্রম দেন এসব নারী। পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন করছে। গরুর খাবার এবং কিস্তির টাকা শ্রম বিক্রি করে পরিশোধ করছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে কৃষি খাতে নারী শ্রমিকের কোনো হিসাব নেই। এমনকি কৃষিকাজে জড়িত এ বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিকের কোনো মূল্যায়নও করা হয় না। মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুবপুর গ্রামের নারী শ্রমিক লিলি রানী ওরাঁও ও কাজলী রানী ওরাঁও অভিযোগ করে বলেন, আমরা পুরুষ শ্রমিকের ন্যায় কাজ করলেও ন্যায্য মজুরী পাইনা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহা. মুশিদুল হক এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিস হতে নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এবং তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি আমরা। তিনি আরও বলেন, কৃষি প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী শ্রমিক স্বাবলম্বী হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম