কৃষি প্রতিক্ষণ ঢাকাঃ বিএনপি-জামায়াত জোট দেশটিকে ভিক্ষুকের সর্দারের মতই পরিচালনা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের নীতিটাই ছিল নিজেদের স্বার্থে দেশের মানুষকে আজীবন ভিক্ষুক বানিয়ে রাখা। তারা কখনও চাইতো না যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে তাদের (বিএনপি-জামায়াত) নীতিটাই আলাদা ছিল। বিএনপি-জামায়াত কখনই চায়নি বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে। কারণ, তাদের সবসময় লক্ষ্য ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। চাল আমদানী করে দু পয়সা কামাই করবে এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলন-২০১৭’ এ প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সাবেক মহাসচিব আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি এটিএম আবুল কাশেম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব মো. আব্দুর রাশেদ খান। এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা উড়িয়ে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলন ২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। তিনি বলেন, সকল কৃষি উপকরণ অতিদ্রুত কৃষকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। সারসহ সকল উপকরণ কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। কৃষিতে ভর্তুকি পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। কৃষি কারিগরি শূন্যপদে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩ কোটি টনে পৌঁছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। ২০০৬ সালে চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত ২৪ কৃষককে গুলি করে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, , এই একটা পরিস্থিতির মধ্যে ’৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই আমরা জাতির পিতার পথ অনুসরণ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। লক্ষ্য ছিল দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা, একেবারে হতদরিদ্রের কাছে খাদ্যটা পৌঁছে দেয়া। আর কৃষকদেরকে আরো উন্নত কৃষিকাজ পরিচালনার জন্য সুবিধা প্রদান করা। তিনি বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি, সকলপ্রকার সারের মূল্য কমানো, বীজ ও সেচ ব্যবস্থাপনা, গবেষণা, প্রণোদনা, মৃতপ্রায় বিএডিসি-কে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম বর্গাচাষীদের কৃষিব্যাংকের মাধ্যমে ঋণদান কর্মসূচি শুরু করে। কারণ, আমাদের দেশে ’৯৭ সালে ঘূর্ণিঝড় হয় এবং ’৯৮ সালে বন্যা হয়। এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আর কখনও হয়নি। প্রায় ৩ মাস বাংলাদেশের ৭০ ভাগ অঞ্চল পানির নিচে ছিল। ক্ষেতের ফসল পচে গিয়েছিল। শিল্প কলকারখানা বন্ধ ছিল। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছিল এই বন্যা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। সেটাও আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা ইনশাল্লাহ কোন মানুষকে না খেয়ে মরতে দেব না। আমরা উদ্যোগ নেই-নিজেরাই এবং এই উদ্যোগের ফলেই কোন মানুষ না খেয়ে বা বন্যার কারণে মারা যায়নি।
তিনি বলেন, কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে আমরা ক্ষমতায় আসার পর জানুয়ারি ২০০৯ থেকে জুন ২০১৩ পর্যন্ত কৃষকের মধ্যে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর বীজ সংরক্ষণ ও সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮২ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হয়েছে। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উচ্চফলনশীল উন্নতজাতের বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গবেষণার মাধ্যমে ফসলের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন প্রসংগে বলেন, পরিবর্তনশীল জলবায়ু প্রতিকূলতার সাথে খাপ খাওয়ার উপযোগী বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের প্রতি আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ১৪৫টি নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের চাষ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ও কৃষি শ্রমিকের অভাব মেটানোর জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ১৬৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। ২৫ শতাংশ কম মূল্যে ৩৮ হাজার ৩২৪টি বিভিন্ন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৬ লক্ষাধিক নারীকে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি, ফসলের বালাই ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ, সংগ্রহ উত্তর ব্যবস্থাপনা এবং বিপণন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ‘একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প’ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকের খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় মানুষের কৃষি উন্নয়নের জন্য ৫৭ হাজার ৬৮কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান সরকার এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রথানমন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলে ১৪টি জেলার মানুষের ফসল, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের বিপুল সফলতা লাভ করবে।’‘ বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিককরণের লক্ষ্যে ই-কৃষি বা ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আজ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টন। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বিদেশেও খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, মাঠে ময়দানে কর্মরত ডিপ্লোমা কৃষিবিদ তথা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সমমান পদধারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, দানাদার খাদ্য শস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও ডাল, তেল, মসলা উৎপাদনে এখনও আমরা চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মসলা উৎপাদনে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছি। চাইলে কৃষকরা এই সুবিধা নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় কৃষি কর্মকর্তাদের দেশের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির অগ্রসেনানী বলেও উল্লেখ করেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম