কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ এ বছর সয়াবিন উৎপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে লক্ষ্মীপুর। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে সয়াবিন বেচাকেনা। এবার এক লাখ ৩ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী যার দাম প্রায় ৩শ’ দশ কোটি টাকা। তবে এক শ্রেণীর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর কারণে সয়াবিনের নায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন চাষীরা। তারা স্থানীয়ভাবে সয়াবিনের শোধানাগার বা কারখানা তৈরীর দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে এবার সহজ শর্তে রাষ্ট্রয়াত্ব ৪টি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা জেলার সয়াবিন চাষীদের এক কোটি ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা ও বেসরকারি সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) সাড়ে ৯ কোটি টাকার কৃষি ঋণ প্রদান করেছিল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের মোট সয়াবিনের ৬৫ ভাগ লক্ষ্মীপুরে উৎপাদন হয়। এখানে উৎপাদিত সয়াবিনের অধিকাংশই পোল্ট্রি খাদ্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এবছর জেলায় ৫২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর বেশি। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর, রায়পুর ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর, রামগতি ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর, কমলনগর ১৮ হাজার ৯০ হেক্টর ও রামগঞ্জ উপজেলায় ৮০ হেক্টর।
আবাদকৃত জমিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। স্থানীয়ভাবে প্রতি মণ সয়াবিন ১১শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে অনুপাতে এখানে উৎপাদিত সয়াবিনের দাম প্রায় ৩শ’ দশ কোটি টাকা। বর্তমানে জেলার রায়পুরের হায়দরগঞ্জ বাজার, খাসেরহাট, সদরের ভবানীগঞ্জ, শাকচর, মজুচৌধুরীর হাট, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, হাজিরহাট, করুনা নগর, লরেন্সবাজার, রামগতির জমিদার হাট, আলেকজান্ডার, রাম দয়াল, বিবিরহাট, রামগতি বাজারে সয়াবিন কেনাবেচা হচ্ছে। সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপুর শাখার এজিএম তোফায়েল আহম্দে জানান, এবার সয়াবিন চাষি পাঁচ শতাধিক কৃষকের মাঝে রাষ্ট্রয়াত্ব ৪টি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে সহজ শর্তে এক কোটি ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) লক্ষ্মীপুর শাখার জোনাল ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন জানান, এবছর তারা জেলার ৪ হাজার ৮৫২ সয়াবিন চাষিদের মাঝে সাড়ে নয় কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছিলেন। কমলনগর উপজেলার চরবাদাম এলাকার সয়াবিন চাষী ইমরান হোসেন ও আবদুল বাতেন কৃষক জানান, এবার মাঠে পোকার উপক্রম তেমন একটা না থাকায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
রায়পুর উপজেলার চর বংশী ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামের সয়াবিন চাষী হযরত আলী জানান, তিনি কোডেক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এক একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন। খুব ভালো ফলন হয়েছে। পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।
কমলনগর ও রামগতি উপজেলার চাষী ও এলাকাবাসী জানায়, ফেনী, নোয়াখালীর চৌমুহনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরসহ কয়েকটি জেলার পাইকার ও সয়াবিন শোধনকারীরা সিন্ডিকেট করে লক্ষ্মীপুরের সয়াবিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। গেল বছর ১২ থেকে ১৪ টাকা প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হলেও এবার ১১শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। জেলায় সয়াবিন ভিত্তিক শিল্প কারখানা তৈরীর জন্য ১৯৯৫সাল থেকে তারা সরকার ও শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে দাবি করে আসছেন। কিন্তু ২১ বছরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সয়াবিনের বাম্পার হয়েছে। দেশের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ সয়াবিন এ জেলায় উৎপাদন হয়ে থাকে। চাষীদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও সহজে বাজারজাতকরণের জন্য স্থানীয়ভাবে সয়াবিনভিত্তিক শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
সুত্রঃ বাসস