কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ খুলনার কয়রা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পোল্ডারের গোলখালি ও হরিণখোলা বেড়িবাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব এলাকার পুরো বাঁধ কপোতাক্ষ নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ইউপি চেয়ারম্যান এলাকার লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়রা সদরের হরিণখোলা বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন রোধে চারদিন ধরে মাটি কেটে বিকল্প রিং বাঁধ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা। তবে ভাঙন তীব্র হওয়ায় বাঁধে ফেলা মাটি দেবে গিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দিন ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান ক্ষতিগ্রস্ত হরিণখোলা বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিতে ইউপি চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিয়েছেন। কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হরিণখোলা বাঁধ ভেঙে গত শনিবার রাতে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। পরে গ্রামবাসী নিজ চেষ্টায় তা আটকে ফেলে। তবে এটা সাময়িক ব্যবস্থা।
নদীতে পানির চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এ ভাঙনে উপজেলা পরিষদসহ ইউনিয়নের পাঁচ-ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে টাকা খরচ করে শ্রমিক লাগিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। তবে গত দুদিন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ হরিণখোলা বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি, এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে পাউবোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’
দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শামসুর রহমান বলেন, ‘মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে এলাকার নারী-পুরুষ ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগ নেন। তারা গত শনিবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এভাবে কত দিন টিকিয়ে রাখা যাবে— এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।’ তিনি বলেন, ‘দ্রুত বাঁধের ভাঙন এলাকা মেরামতে পাউবো কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না এলে ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৩টি গ্রাম লোনা পানিতে তলিয়ে যাবে।’
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নীলিমা চক্রবর্তী বলেন, ‘গাঁতীরঘেরী বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বাঁধের তিন-চতুর্থাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে।’ বাঁধ সংস্কারের বিষয়ে জানতে পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলামকে তার দপ্তরে না পেয়ে সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। পরে পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব ভৌমিকের সেলফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘বাঁধ সংস্কারের ব্যাপারে পাউবো কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের শ্রমিক সেখানে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা না হলে ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।’
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম