‘ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ’
কৃষি প্রতিক্ষণ ঢাকাঃ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৭১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ধান ও রবি শস্য পানিতে ডুবে গেছে।আর এ তিন জেলায় ২ কোটি ৫ লাখ মন ধান পানিতে পচছে। ফসলডুবির ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। ক্ষেতের ধান নষ্ট হতে দেখে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হাওর এলাকার জমি এক ফসলি। এক মওসুমের ফসল দিয়ে তাদের সারা বছর চলতে হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরগুলোর ফসল ডুবে যাওয়ার জন্য বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের অর্থ লোপাটসহ নানা অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দিকে উঠেছে অভিযোগের আঙ্গুল। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান গতকাল বলেছেন, অনিয়ম তদন্তে সরকার উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করবে।
গতকাল রবিবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম’ এর এক সাংবাদিক সম্মেলনে ফসল ডুবির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন।সংবাদ সম্মেলনে হাওর অ্যাডভোকেসির যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান বলেন, গত ১১ থেকে ১৩ মার্চ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে তারা বাঁধ সংস্কারের কাজে নানা অব্যবস্থাপনা দেখেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, এবার হাওরের মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়বে। আগের বছরগুলোতে হাওর পানিতে ডুবে গেলেও ধান পাকা থাকে। তখন পানির তল থেকে হলেও কিছু না কিছু ধান কেটে আনা হয়। এবার ধান ক্ষেতে থোড় আসেনি। এমন বিপর্যয় আমি কখনো দেখিনি। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটি জেলাতেই (সুনামগঞ্জ) যদি বছরে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাহলে বলব না, টাকার কোনো অভাব ছিল। বিষয়টা খুব স্পষ্ট যে দুর্নীতির মধ্যে দিয়েই টাকাগুলো আত্মসাত করা হচ্ছে।
এদিকে বাঁধ ভেঙ্গে ফসলডুবির ঘটনায় গতকাল রবিবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় তোপের মুখে পড়েন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। সভায় ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেন, পাউবো’র ঠিকাদার ও পিআইসিদের গাফিলতিতে সুনামগঞ্জে প্রায় ২০ লাখ কৃষক দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা পাউবো ও পিআইসি’র দুর্নীতির তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বিল না দেওয়ার দাবি জানান। সভা শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জে ৭০ ভাগ জমির ফসল ডুবেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিও এজন্য দায়ী। এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি করার জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ করবো।
অপরদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সদর মুক্তিযোদ্ধাসংসদ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। কৃষকদের অভিযোগ-বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়া এবং কাজে অনিয়মের কারণেই হাওরে এই অসময়ে ফসলহানি ঘটেছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর এলাকার কৃষক মাফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এবার অপরের জমিসহ মোট ৬ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাঁধ ভেঙে সব শেষ হয়ে গেছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম