কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে দিন দিন বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। জেলায় এ বছর দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬৩৪ কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওরের এই ফসল রক্ষায় ৫৮ কোটি ৭২লাখ টাকা ব্যয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে।কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়া এবং কাজে অনিয়মের কারণেই হাওরে এই অসময়ে ফসলহানি ঘটেছে। ইতোমধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে শতাধিক হাওরের এক লাখ তিন হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটির টাকার উপরে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিরামহীন অতিবৃষ্টি হওয়ায় হাওর রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়া ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, হাওর রক্ষাবাঁধের কাজ সঠিক সময়ে হলে কৃষকদের এতো বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। ঠিকাদার সামান্য কাজ করেই বাঁধের কাজ করেই বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এজন্য বাঁধ দুর্বল হওয়ার ফলে বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়ে হাওরে পানি ঢুকে ধান তলিয়ে গেছে। জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলারই প্রায় সবকয়টি বড় হাওরের ফসল পানিতে ডুবেছে।
জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাঁচটির মধ্যে চারটি হাওরের ধান বৃষ্টির পানি ও বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দেখার হাওর,কাই হাওর, জাম কলা হাওর, সাংহাই হাওরের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জানা যায়, উপজেলার ১৩ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে, এই জমির ধান পাওয়া গেলে বাজার মূল্য হতো প্রায় ৯০ কোটি। হাওরে যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের কোনো চিহ্ন নেই।
হাওরপাড়ের বাসিন্দা করিমুন নেছা বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছেন ১২ বছর হয়। জমি বাগি দিয়ে আমার দুই ছেলে আবাদ করেছিল। বাঁধ ভেঙে এখন সব ফসল তলিয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। ঘরে ভাত নেই, হাঁড়িতে চাউল নেই। গতকাল তিন কেজি আটা এনে রুটি তৈরি করে খাই। হালের গরু বিক্রি করবো। সরকারের কেউ আমাদের দেখে না।’
কৃষক কুদরত আলী বলেন, ‘আমার ছয় কেয়ার জমি ছিল। সব জমির ধান তলিয়ে গেছে। আমি এখন অসহায়। আমার পরিবারে ৪ মেয়ে, ১ ছেলে। ঘরে খাবারের কিছুই না থাকায় আটা এনেছি। কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ এনেছিলাম। এখন ঋণ পরিশোধ করবো কেমনে।’
লক্ষণশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘আমাদের এলাকার শতভাগ মানুষ দেখার হাওরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু পুরো হাওরের ফসলই তলিয়ে গেছে। মানুষের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। তাদের সান্ত্বনা দেয়া ভাষা আমাদের নেই।’
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ইসলাম