‘অভিন্ন পানিসম্পদ অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ করার শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ অভিন্ন নদীর পানির ভাগাভাগি হবে বাংলাদেশ – ভারত সম্পর্ক উন্নতির বড় নিয়ামক, সেটি ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আবারও মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের দেওয়া সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা চুক্তি সই হলে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন রূপান্তরের নতুন পর্যায় অতিক্রম করবে।তিস্তার চুক্তির বদলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন প্রস্তাবে বাংলাদেশ আশাহত হয়েছে। দিল্লির একটি হোটেলে আয়োজিত ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ভারতের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের প্রধান শরিক ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
তিস্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা হিন্দিতে বলেন, ‘মুঝে পাতা নেহি দিদিমণি কেয়া কারেগি। দিদিমণি কি সাথ বাত হুয়ি। উনোনে নয়া কুছ দেখা দিয়া, লেকিন মোদিজি এসিউর কিয়া। আব হাম বেঠা হে দেখনে কে লিয়ে কেয়া হোতা হে। লেকিন দিদিমণি এক কাম কিয়া। হাম ইলেকট্রিসিটি দেয়েঙ্গে। পানি মাঙ্গা লেকিন ইলেকট্রিসিটি মিলা, আচ্ছাই হে। কুছ তো মিল গেয়্যা।’ (আমি জানি না, দিদিমণি কী করবেন। দিদিমণির সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি তো নতুন কিছু দেখিয়ে দিলেন, তবে মোদিজি আশ্বস্ত করেছেন। কী ঘটবে তা দেখার জন্য আমি বসে আছি। তবে দিদিমণি একটা কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি বিদ্যুৎ দেব। পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু বিদ্যুৎ পেয়েছি, ভালোই তো হলো। কিছু তো পেলাম।)
তিস্তা যে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করবে, সেটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের অভিন্ন পানিসম্পদ অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ করার শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে অভিন্ন নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনার সমাধানের জন্য একটি সমন্বিত ও অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা।’ তিনি আরও বলেন, তিস্তার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এটি হওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের রূপান্তর আরেকটি পর্যায় অতিক্রম করবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতে দুই দেশের বন্ধুতার শিকড়ের প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুতা এবং বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সরকারি পর্যায়ে আমরা যেটাই করি না কেন, দুই দেশের জনগণের সংহতি, আমাদের গভীর আবেগ, সংস্কৃতি আর ঐতিহাসিক বন্ধনের মধ্যেই সম্পর্কটা নিহিত।’ তাঁর মতে, আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসার ফলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব কিছু নতুন মাত্রার অংশীদারত্বের প্রতীক।
ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সমন্বিত উপায়ে ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ দূর করেছি। দুই দেশের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার এটি একটি কারণ। সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে আমরা যৌথভাবে প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে কয়েক স্তরের কার্যকর দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা বিন্যাস তৈরি করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদের উত্থান আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধির যাত্রাপথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের বাইরের নিরাপত্তাঝুঁকি আমাদের অর্থনীতি ও সমাজকে সমন্বিত করার প্রয়াস ব্যর্থ করে দিতে চায়।’
শান্তিপূর্ণ উপায়ে স্থল ও সমুদ্রসীমার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্থলসীমান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য ভারতের সব রাজনৈতিক দল এবং লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের আবারও ধন্যবাদ জানান। জ্বালানি খাতে বিভিন্ন মাধ্যমে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য নেপাল ও ভুটানে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প ঠিক করা হয়েছে।
এদিকে ভারতের অনেক সংবাদপত্র তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে। হিন্দুস্তান টাইমস বলেছে, তিস্তায় মমতার নয়া মোচড় ভারত-বাংলা সম্পর্ককে ঘোলা পানিতে ফেলে দিয়েছে। নিরাপত্তার মতো বিভিন্ন খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছিল, তিস্তা সই না করার কারণে তার গতি ধরে রাখা শেখ হাসিনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফও একই ধরনের মত প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম হচ্ছে ‘তিস্তায় হতোদ্যম এবং আশা’। তারা লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ভারত সরকারের চেষ্টা মমতার প্রস্তাবের কারণে জটিল হয়ে পড়ল।
কৃপ্র/এম ইসলাম