‘খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাহাড়ি ঢলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় ও বিভিন্ন স্থানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে চলতি মৌসুমে বোরো উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে হাওর প্লাবিত হয়ে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়া ও চাহিদা মতো ধান সরবরাহ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চালের দর ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দামেরও প্রায় একই অবস্থা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার টন। গত বছর ১ কোটি ৯০ লাখ টন উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও উত্পাদন হয়েছিল ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৭ হাজার টন।
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, হাওরে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বোরোর মোট উত্পাদন কিছু কম হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। কারণ, সারাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে এবার বোরোর উত্পাদন ভালো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাওরের কৃষকদের পাশে রয়েছি আমরা। ইতিমধ্যে সেখানকার কৃষকদের কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই মুহূর্তে ঋণ আদায়ও বন্ধ রয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, হাওর এলাকায় বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় সাড়ে চার লাখ টনের মতো চাল নষ্ট হবে। তবে সবমিলিয়ে এবার বোরোর উত্পাদন বেশি হওয়ায় হাওর এলাকায় বোরোর কিছু ক্ষতি হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। গত রবিবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব, কোনো অসুবিধা হবে না।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মনজুরুল হান্নান বলেন, হাওর প্লাবিত হয়ে বোরো ধান তলিয়ে গেলেও সারাদেশে সামগ্রিক উত্পাদনের উপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া দেশের কোথাও কোথাও বোরো খেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হলেও তা মারাত্মকভাবে দেখা দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত বোরো আবাদের অগ্রগতির হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। তবে বোরো উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলো কি না তা অনেকটা নির্ভর করে বোরো সংগ্রহের উপর। কেবল ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরও বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
তবে হাওর অ্যাডভোকেসির যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ হাওর প্লাবিত হয়ে এক লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জেরই এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এতে ওই তিন জেলায় ২ কোটি ৫ লাখ মণ ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সারাদেশে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে হাওর অঞ্চলে ১ লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এত বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বোরো উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। এ ছাড়া ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোরো আক্রান্ত হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম