কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পঞ্চগড় বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বৈরী আবহাওয়া, জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বীজের সমস্যার কারণে এ রোগ দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত শুধু বোদা উপজেলায় এ রোগ দেখা দিয়েছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আছে। কৃষকদের দাবি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে কেনা বীজ রোপণ করায় ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ে এবার ৩০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এর মধ্যে চাষ হয়েছে ৩০ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। আর এবার বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৮ টন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বোদা উপজেলায় নেক ব্লাস্ট (ধানের গলা পচা রোগ) রোগের সংক্রমণ ঘটেছে।কৃষকরা জানিয়েছেন, বোদা ছাড়াও দেবীগঞ্জে ব্লাস্টের সংক্রমণ ঘটেছে। দ্রুত এ রোগের বিস্তার ঘটছে। নানা রকমের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে এবার ফলন কম হতে পারে।
সরেজমিন দেখা যায়, বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়নের কোয়ারীমিল এলাকার কয়েক শত একর বোরো ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্টের সংক্রমণ হয়েছে।স্থানীয় বোরো চাষী মো. ইসলাম বলেন, আমি ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে মহাজনকে পাঁচমণ করে ধান দিতে হবে। পঞ্চগড় বিএডিসি অফিস থেকে কেনা বীজ দিয়ে ধান আবাদ করেছিলাম। এখন আমার পুরো ছয় বিঘা জমির ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। বীজ নেয়ার সময় আমরা অফিসে বারবার রসিদ চেয়েছি, কিন্তু তারা দেয়নি। এখন আমি জমির মালিককে কি দেব আর আমি কি খাব? আরেক চাষী যাদব চন্দ্র শর্মা বলেন, আমি সাড়ে আট বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। এর মধ্যে চার বিঘা নিজের জমি আর বাকিটা বর্গা নেয়া। এখন পুরো ক্ষেতে সব ধানের শীষ আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সেচের খরচ, অন্যদিকে বর্গার ধান এখন কোনটা কীভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। কোনো ওষুধ দিয়েও তো কাজ হচ্ছে না।
তবে বিএডিসির সরবরাহকৃত বীজের কারণে ব্লাস্টের সংক্রমণের কথা অস্বীকার করেছেন সংস্থাটির পঞ্চগড় বীজ বিপণন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হাই। তিনি বলেন, এবার সারা দেশেই বোরো ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ব্লাস্ট বীজবাহিত রোগ হলেও এবার বৈরী আবহাওয়ায় কারণে এর বিস্তার ঘটছে। আমাদের এখানে চাষীরা বীজ কিনলে অবশ্যই তাদের রসিদ দেয়ার কথা। তার পরেও এ ধরনের কোনো অভিযোগ যদি কেউ করে আমার মনে হয় সেটা সত্য না।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত ও বীজবাহিত রোগ। এটি কোনো বীজে থাকলে পরবর্তীতে তা জমিতে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এবার দিনে রোদ আর রাতে ঠাণ্ডার কারণে এবং মাঝে মাঝে মেঘলা আকাশের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যে সব চাষীর বোরো ক্ষেত ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে, তাদের পাশে থেকে আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া আশপাশের যেসব ক্ষেতে এখনো ব্লাস্ট ছড়ায়নি সেসব ক্ষেতে প্রতিষেধক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম