কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির পাকা ও আধা পাকা বোরো জমির ধান, তিল, মুগডাল, মরিচ, ফুট, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কোনভাবেই ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
তবে টানা বর্ষনে এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার ইউসুফ হোসেন জানান, কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে গত পাঁচদিন ধরে দক্ষিনাঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাঁচদিনে এখন পর্যন্ত ২৩০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও ২/১ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান। পাচ দিনের টানা বর্ষণে জেলার উজিরপুর, আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ, বানারীপাড়া , বাকেরগঞ্জ ও সদর উপজেলার হাজার হাজার একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং জমিতে হাটু সমান পানি জমে যাওয়ায় কোন ভাবেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। তবে এসব উপজেলার অপেক্ষাকৃত একটু উঁচু এলাকার কৃষকদের সমস্যা না হলেও বিপাকে পরেছেন অপেক্ষাকৃত নিচু ও বিলাঞ্চলের কৃষকরা। তাদের অধিকাংশ জমিতে এখন হাটু সমান পানি জমে গেছে। আর দুই একদিন বৃষ্টি হলেই পুরো ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা।
উজিরপুর উপজেলার নিন্মাঞ্চল এলাকা সাতলার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আজাদ জানান, টানা বর্ষনে তার এলাকার ইরি-বোরো ক্ষেতে ইতোমধ্যেই হাটু সমান পানি জমেছে। যদি আবহাওয়া ভালো হয় তবে তেমন সমস্যা হবে না বলে এখনো আশাবাদী উজিরপুরের কৃষকরা। ইউপি চেয়ারম্যান জানান, জমির ধান কাটতে এখানে দুর দুরান্ত থেকে অনেক শ্রমিক এসেছে। পানিতে ধান কেটে তা ডাঙ্গায় তুলে আনতে চরম দূর্ভোগ ও ভোগান্তির আশংকায় ইতোমধ্যে অনেক শ্রমিকরাই রাতের আধারে এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
একই কথা জানিয়েছেন উজিরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল। তিনি বলেন-পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দল বেধে কৃষি শ্রমিকরা এ মৌসুমে এখানে আসেন ধান কাটার জন্য। এরা ধান চাষীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ধান কেটে কৃষকের গোলায় তুলে দেন। এবার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর বৈরী আবহাওয়ার কারনে ধান ক্ষেত প্লাবিত হওয়ায় এ সব শ্রমিকরা দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়ছেন তাই তারা অনেকেই চলে যাচ্ছেন।
সূত্রমতে, টানা বর্ষণে শুধু বোরো জমির ধানই নয়; ক্ষতি হয়েছে তিল, মুগডাল, মরিচ, ফুট, তরমুজসহ বিভিন্ন শষ্যের। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব ফসল এখন পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কাদের হাওলাদার জানান- তার জমিতে এবার রবিশষ্যের সবই নষ্ট হয়েছে অকাল বর্ষনে। তরমুজ চাষীরা এ বার মাঠে মারা যেতে বসছেন। তবে টানা বৃষ্টিতে এসব ফসলের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
এ বিষয়ে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য স্ব-স্ব উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম