কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আম উৎপাদনের দিক থেকে রাজশাহী প্রথম হলেও স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আম প্রথম। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরের সুস্বাদু হিমসাগর আম এবারও দেশের বাইরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত দেশগুলোতে রফতানি হতে যাচ্ছে। মেহেরপুর থেকে কীটনাশক মুক্ত আম গতবছর প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে যাওয়াতে আমচাষিদের মধ্যে অন্য ধরনের উৎসাহ দেখা দেয়।
গত বছর মেহেরপুর থেকে ১২ মেট্রিক টন আম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। সুস্বাদু আম হওয়ায় চাহিদা বেড়ে চলতি বছর ২শ’ মেট্রিক টন আম যাবে ইউরোপিয়ানভূক্ত দেশগুলোতে। এজন্য জেলার বিভিন্ন আমবাগানে ব্যাগ পদ্ধতিতে আমচাষ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমের রাজা হিমসাগর আমকে ছড়িয়ে দিতে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৫ সালে উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগে জেলার ১৫টি বাগান নির্বাচন করা হয়। রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান সেসব বাগান থেকে প্রথমবারের মতো ৪৫ হাজার আম সংগ্রহ করে। এবার যাবে ২শ’ মেট্রিক টন আম। নির্ধারিত বাগানগুলোতে গাছের আমে কার্বোন ব্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে। আমচাষিদের প্রতিটি কার্বোব্যাগ কিনতে হয়েছে ৪ টাকা করে। এসব ব্যাগ দুই বছর ব্যবহার করা যাবে। মেহেরপুর থেকে আম রপ্তানি নিয়ে কাজ করছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংস্থা সলিডারিডেড নেটওয়ার্ক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর থেকে চাষি নির্বাচন করা হয়েছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিভিত্তিক আম উৎপাদনের জন্য। ইউরোপিয়ানভূক্ত ৮টি দেশে যাবে মেহেরপুরের আম।মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ও ঝাউবাড়িয়া গ্রামের নির্বাচিত আমবগানে ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোতে কার্বোব্যাগ পরানো আম। সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের ৩০ বিঘা জমিতে থাকা আমগাছের মালিক শাহীনুর রহমান জানান, তার বাগানে ৩শ’টি হিমসাগর আমের গাছ রয়েছে। এসব গাছে আম বাছাই করে সেগুলো একধরণের কার্বোন ব্যাগ পরিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে প্রতিটি গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা।
আম চাষিরা জানান, আমে আটি আসার পর থেকেই বাছাইকরা আমে ওই ব্যাগ পরানো হয়েছে। ওই ব্যাগ পরানোর ফলে বাহিরের কোনো রকম রোদ, বৃষ্টি এমনকি পোকামাকড় ওই আমকে ক্ষতি করতে পারবে না। এ ধরনের নির্বাচিত বাগানগুলোতে আম বাছাই করে ব্যাগে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ২শ মেট্রিক টন আম রপ্তানী করা হবে। আগামী ২০ মে থেকে ওই আম সংগ্রহ শুরু হবে।
বাগান মালিক ওবাইদুর রশিদ সুমন জানান, তার বাগানের আম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যাবে শুনে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যে আমগুলো নিচ্ছে সেগুলোর দাম ভালো পাওয়া যায়। যার কারণে আমচাষিরা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য উৎসাহিত হবেন এবং আমগাছ পরিচর্যায় আরো যত্মবান হবেন। মিনারুল ইসলাম নামের এক আমচাষি জানান, বিদেশে আম রপ্তানির জন্য যে আম বাছাই করা হয়েছে। সেগুলো যতœ নেয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাগান মালিকেরা । রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান ই্উনিয়ন প্রতিনিধি মফিজুর রহমান বলেন, ব্যাগে সংরক্ষন করলে আমের বোটা শক্ত হবে এবং আমটি বাইরের যে কোনো ক্ষতিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পাবে এবং রঙ নষ্ট হবে না। দামও ভালো পাবে চাষী।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মেহেরপুরের হিমসাগর দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু আম। তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে মেহেরপুরের এই সুস্বাদু হিমসাগর আম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, চাষিদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে ব্যাগ পদ্ধতিতে আমচাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম