কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বন্যায় মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে উঁচু অংশে যে ধান ছিল, তা নিয়েই হাওরপারের অনেক কৃষক আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেই ধানও শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ধান কাটতে গিয়ে হতাশ কৃষক। গত ৫ মে শিলাবৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার আখাইলকুরা ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওরপারের কৃষকদের মতো এ জেলার অনেক কৃষকের ধান ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।খবর প্রথম আলো।
এ বিষয়ে কাউয়াদীঘি হাওরপারের অন্তেহরি গ্রামের অপিন্দ্র নমশূদ্র বলেন, তাঁর ২০ কিয়ার (২০ বিঘা) ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। একটু উঁচুতে থাকায় চার-পাঁচ কিয়ার ধান রক্ষা পেয়েছিল। এইটুকু নিয়েই আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিন। এখন তাও শিলাবৃষ্টিতে চিটা হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ফসলপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
দেখা গেছে, কৃষকেরা পাকা ও আধা পাকা ধান কাটছেন। হাওরের কাছেই এই ধানখেত। আরও একটু পানি বাড়লে এই খেতগুলোও পানিতে তলিয়ে যেত। কিছু কিছু বাড়িতে চলছে কেটে আনা ধান ঝাড়াই-বাছাই। ধান ঝাড়াই যন্ত্রে এক দফা ধানের চিটা বাছাই করা হয়েছে। পরে আবার কুলা দিয়ে চিটা বাছাই করা হচ্ছে। এক জায়গায় দেখা গেল মেশিনে ধান ঝাড়াই চলছে।
আখাইলকুরা ইউনিয়নের সানন্দপুর গ্রামের কৃষক পারভেজ মিয়া বলেন, ‘পয়লা খাইলো পানিয়ে। অখন হিলে (শিলাবৃষ্টি) আর চুচায় (চিটায়)। কিয়ারো ২০-২২ মণ ধান পাওয়ার কথা। অখন ১০-১২ মণের বেশি পাওয়ার সুযোগ নাই। বেশি বৃষ্টি অওয়ায় (হওয়া) ও মওয়া (মাজরা) পোকার আক্রমণে ধানে চুচা (চিটা) অইছে। ৩৫ কিয়ার বোরো ধানের মাঝে ১৫ কিয়ারই পানির নিচে।’ পারভেজ মিয়া আরও বলেন, শিলাবৃষ্টি যে দিক দিয়ে হয়েছে, সে দিকে পাকা ধান ঝরে পড়েছে। কাঁচা ধানও নষ্ট হয়েছে।
কাটা ধান মাথায় করে বাড়ি ফিরছিলেন অন্তেহরি গ্রামের সুনীল নমশূদ্র (৪০)। ধানের প্রসঙ্গ উঠতেই বুকভরা কান্না যেন কথা হয়ে ফুটতে থাকে। তিনি বলেন, ‘দুই কিয়ার জমিত ধান পাইতামনায় ১০ মণ। পরিবারে আটজন মানুষ। কেমনে চলতাম। যে ধান পাইমু, তা দিয়া দুই মাসও যাইতোনায় (যাবে না)। আশা করি রইচলাম (থেকেছিলাম)। আশা নিছইনগি ভগবানে। অখন ভালা কথা কইলেও তিতা লাগে। আমরার জানু রিজেক নিছইনগি (আমাদের খোরাক নিয়ে গেছে)। অখন খড় নিরাম (নিচ্ছি) গরু বাঁচাইবার লাগি।’
কাদিপুর গ্রামে রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে কুলা দিয়ে ধান ঝাড়াই-বাছাই করছিলেন এক কিষানি। কাছেই দাঁড়ানো বাড়ির কর্তা রেজাক মিয়া (৬০) বলেন, ‘তিন ভাগর এক ভাগই চুচা (চিটা)। আগে পানিয়ে নিল। অখন যা ধান আছিল (ছিল) এতে চুচা (চিটা)। খরচই ওঠতো নায়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৫৩ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে আগাম বন্যায় হাওরের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। নতুন করে শিলাবৃষ্টিতে জেলার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার ১৬৯ হেক্টর বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে শুধু কুলাউড়া উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে সবজির ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২০ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪ হেক্টর।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘শিলাবৃষ্টিতে যতটুকু জমি আক্রান্ত হয়েছে, তার ১০-১৫ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে ধানে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চিটা থাকে। কিন্তু ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এই পরিমাণ বেড়ে গেছে। যে দিকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়নি, সে দিকে ধান ভালো হয়েছে। হাওর এলাকায়ই বেশি ক্ষতি হয়েছে।’
কৃপ্র/এম ইসলাম