কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহীর তানোর ও মোহনপুর উপজেলার বিলকুমারী বিলের আধা পাকা ধান আর পাকতে পারল না। ভারী বর্ষণ ও শিব নদের উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে বিলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমির ধান। চাষিরা কোনো রকমে পানি থেকে পাকা ধান কেটে তুলছেন। কিন্তু আধা পাকা ধান পচে বিলে গন্ধ ছড়াচ্ছে। তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিলকুমারী বিলের আয়তন ১৯৩ হেক্টর। এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে শিব নদ। নদের পশ্চিম পাশে তানোর ও পূর্ব পাশে মোহনপুর উপজেলা। দুই উপজেলার চাষিরাই এই বিলে বোরো ধান চাষ করেন। সপ্তাহখানেক আগে শিব নদের পানিতে এই বিল তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে কৃষকেরা পানির ভেতর থেকে নষ্ট হওয়া ধান কেটে তুলছেন। কিন্তু আধা পাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার এই দুই উপজেলায় গিয়ে বিলকুমারীর কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরির শ্রমিক দিয়ে পানি থেকে তাঁদের ধান কেটে তুলতে হচ্ছে। এতে তাঁদের ধান চাষের খরচ উঠবে না। আর যাঁদের জমির সম্পূর্ণ ধান নষ্ট হয়েছে তাঁরা হাহাকার করছেন। তানোরের কুঠিপাড়া গ্রামের চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, এই বিলে তাঁর সাড়ে ছয় বিঘা জমির কাঁচা ধান সব নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি একটি ধানও কেটে ঘরে তুলতে পারেননি। একই কথা বলেন, কচুয়া গ্রামের চাষি মামুন হোসেন। তাঁর সাড়ে তিন বিঘার ধান সব নষ্ট হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিলে গিয়ে দেখা যায়, কিছু চাষি তলিয়ে যাওয়া আধা পাকা ধান কেটে তুলছেন। কিন্তু সারা বিলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ধানের খড় পচে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় মোহনপুরের মহিষকুণ্ডি গ্রামের মামুনুর রশিদকে শ্রমিক নিয়ে পানি থেকে ধান কাটতে দেখা যায়। তিনি বলেন, তাঁর দেড় বিঘা জমির সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলো সব আধা পাকা ধান। এখন দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরির শ্রমিক দিয়ে এই ধান কেটে তুলতে হচ্ছে। ধান থেকে খড় পচা গন্ধ বের হচ্ছে। কিছু পাওয়ার আশায় ধান কাটছেন। কিন্তু এই ধানের ভাত খেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে।
একই গ্রামের আফজাল হোসেন আড়াই বিঘার আধা পাকা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এর ভেতরে থেকে কিছু ধান যদি ভালো পাওয়া যায় এই আশায় কাটছেন। কিন্তু ধান কাটার যে খরচ হচ্ছে সব মিলিয়ে কিছুই থাকবে না। একই কথা বলেন, মোহনপুরের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চাষি ইব্রাহিম হোসেন। তাঁর এক বিঘা জমির সব ধানই তলিয়ে গেছে।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ প্রায় আট হেক্টর। এই হিসেবেই তাঁরা প্রতিবেদন দিয়েছেন। মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, তাঁর উপজেলায় বিলকুমারীর ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১০ হেক্টর।
সুত্রঃ প্রথম আলো/ কৃপ্র/এম ইসলাম