কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ধান উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে গত পাঁচ বছরে ধানের পাঁচটি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টিভিটি প্রজেক্ট-ব্রি কম্পোনেন্ট (আইএপিপি-ব্রি কম্পোনেন্ট)। উদ্ভাবন করা হয়েছে নয়টি ফসল ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি। ফলে প্রকল্প এলাকায় ব্রিডার বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়াও শিগগিরই খরা, বন্যা ও ঠাণ্ডা সহনশীল আরও উন্নত ধানের জাত উদ্ভাবন করা হবে, যেগুলোর অগ্রগামী কৌলিক সারিসমূহ ইতিমধ্যেই উদ্ভাবন করা হয়েছে।
গতকাল গাজীপুরস্থিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আইএপিপি-ব্রি অঙ্গের সমাপনী কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের আকস্মিক বন্যা, খরা ও ঠাণ্ডা পীড়িত রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী এই চারটি জেলায় এবং জোয়ার ভাটা ও লবণাক্ততা কবলিত বরিশাল অঞ্চলের ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী এই চারটি জেলার ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করার মূল উদ্দেশ্যে আইএপিপি-ব্রি কম্পোনেন্ট থেকে প্রকল্পের সহযোগিতায় গত পাঁচ বছরে ধানের পাঁচটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো— ব্রি ধান৬১, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৬৫, ব্রি ধান৬৬ এবং ব্রি ধান৬৭। এ ছাড়াও নয়টি ফসল ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প এলাকায় ব্রিডার বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ওই কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএপিপির উপ-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. হেমায়েৎ হুসেন, এফএও এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান, ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. শাহজাহান কবীর এবং পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আনছার আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএপিপি-ব্রি কম্পোনেন্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং ব্রির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল কাদের। কর্মশালায় আরও জানানো হয়, ধান উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের উন্নত জাত ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনাসমূহ কৃষকের মাঠে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইএপিপি-ব্রি অঙ্গ, আইএপিপি-বিএডিসি, আইএপিপি-ডিএই, আইএপিপি-এসসিএ অঙ্গের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কাজ করে যাচ্ছে।
আইএপিপি ব্রি-অঙ্গ প্রকল্প থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি ধানের জাত এবং নয়টি ফসল ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ছাড়াও ৪৫ টন ব্রিডার বীজ, ৩৫০টি প্রযুক্তি প্রদর্শনী এবং ১ হাজার ৪৬০টি পিভিএস, ভ্যালিডেশন, অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল কৃষকের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে খরা, বন্যা ও ঠাণ্ডা সহনশীল আরও উন্নত ধানের জাত উদ্ভাবন করা হবে যেগুলোর অগ্রগামী কৌলিক সারিসমূহ ইতিমধ্যেই উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রকল্প থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার জন কৃষক, ৮৬০ জন বৈজ্ঞানিক সহকারী ও বিজ্ঞানীদেরকে আধুনিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ওপরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ব্রির গবেষণা দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ৯১টি ল্যাব ইকুয়েপমেন্ট, বিভিন্ন কেমিক্যালস ও ল্যাব এক্সেসরিজ ক্রয় করা হয়েছে এবং প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুর ও বরিশালের ব্রিডার বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করা যায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রির গবেষণা দক্ষতাসহ প্রকল্প এলাকার ধানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। আয়োজকরা জানান, দি গ্লোবাল এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম (জিএএফএসপি) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১১-১২ অর্থবছর হতে যাত্রা শুরু হয়ে বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।