কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ: সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদন নির্ভর করে দুগ্ধবতী গাভীর যত্নের উপর। নিচে দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা বর্ণনা করা হলো :
১.গাভীর বাসস্থান প্রতিদিন মেঝে, দেয়াল, নালা, নর্দমা ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ২. প্রতিদিন গাভীকে ভালোভাবে ব্রাস করে গোসল করাতে হবে। গোসলের পর দেহ মুছে দিতে হবে। ৩. গোসলের পর চিরুনি দিয়ে দেহ আঁচড়িয়ে দিতে হবে। এতে পরজীবী দ্বারা গাভী আক্রান্ত হবে না। ৪. প্রচুর পরিমাণে কাঁচাঘাস, পানি ও সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। ৫.গাভীর দেহে সকালের রোদ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. গাভীকে প্রতিদিন ব্যায়ামের জন্য হাঁটাতে হবে। ৭. প্রচণ্ড রোদ, বৃষ্টি ও শৈত্য প্রবাহের সময় গাভীকে ঘরে রাখতে হবে। ৮. গাভীকে দিয়ে ভারবাহী কাজ করানো যাবে না। ৯. প্রতিদিন দুইবার সম্পূর্ণ দুধ দোহন করতে হবে। দোহনের সময় যাতে বাঁট বা ওলান ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ১০. বাছুরকে নিয়মিত দুধ খাওয়াতে হবে। ১১. দুধ দোহনকারী বা দুধ দোহনের যন্ত্র জীবাণুমুক্ত করে দুধ দোহন করতে হবে। ১২. বাছুর ও গাভী এক বাসস্থানে এবং একসাথে রাখতে হবে। ১৩. গাভীকে ষাঁড়ের সাথে বা অন্য পশুর সাথে রাখা যাবে না। ১৪.গাভী ও বাছুরকে টিকা দিতে হবে। কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। ১৫. অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। ১৬.গাভীকে ভয় দেখানো বা মারপিট করা যাবে না। ১৭. দুধ দোহনের সময় গাভীকে উত্তেজিত করা যাবে না। এতে দুধ উৎপাদন কম হয়।১৮. গাভী ও বাছুরের থাকা, খাওয়া সবকিছু আরামদায়ক হতে হবে। ১৯. দুগ্ধবতী গাভীর সুষম খাদ্য হচ্ছে দৈনিক সবুজ কাঁচা ঘাস ১৫-২০ কেজি, শুকনা খড় ৩-৫ কেজি, দানাদার খাদ্য মিশ্রণ ২-৩ কেজি, লবণ ৫৫-৬০ গ্রাম ও পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়াতে হবে।
গাভীকে প্রতিদিন নিম্নলিখিত পরিমাণ খাদ্য খাওয়াতে হয়
ক. প্রতি ১.৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য খড় ও কাঁচা ঘাসের সাথে ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হয়। খ. শুধু খড় খাওয়ালে প্রতি ১.২৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ০.৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হয়। গ. গাভী প্রতি ১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২-৩ কেজি শুকনা খাদ্য দিতে হয়।
দুগ্ধবতী গাভীর দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তৈরি
১. চালের কুঁড়া ২ কেজি
২. গমের ভুসি ৫ কেজি
৩. খেসারি ভাঙা ১.৮ কেজি
৪. তিল বা বাদামের খৈল ১ কেজি
৫. লবণ ০.১ কেজি
৬. খনিজ মিশ্রণ ০.১ কেজি
মোট ১০ কেজি
খৈল গুঁড়ো করে সব খাদ্য উপাদান মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। খড় ও কাঁচাঘাস ছোট ছোট করে কেটে খাওয়াতে হবে। খড়ের সাথে চিটাগুড় ও ইউরিয়া মিশ্রিত করে খাওয়ালে দুধ উৎপাদন বাড়ে। ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে।
লেখক: কৃষি প্রাবন্ধিক,বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত, সম্পাদক- কৃষি প্রতিক্ষণ।
কৃপ্র/এম ইসলাম