কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : রংপুর অঞ্চলে ভারতীয় ও নিম্নমানের ধানের বীজ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অননুমোদিত ভারতীয় স্বর্ণাবীজ। এ অবস্থায় সরকারি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কর্মকর্তারা কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় একটি অসাধু চক্র লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের অন্যতম সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ডিলাররা কৃষক পর্যায় বীজ বিক্রি করতে পারছেন না। খবর বনিক বার্তা অন লাইনের।
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ মৌসুমের আমন বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে। তাই বিএডিসি তাদের উত্পাদিত বীজ কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করার জন্য ৫ মে থেকে এ অঞ্চলের নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে তা সরবরাহ করতে শুরু করেছেন। জাতগুলো হচ্ছে বিআর-১১, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬ ও বিনা-৭।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ ব্যবসায়ী নিজেদের সুখ্যাতি ধরে রাখার জন্য সরকার অনুমোদিত কোম্পানি উত্পাদিত মানসম্মত বীজ বিক্রি করছেন। তবে অনেকে বেশি মুনাফার আশায় বিক্রি করছেন ভারতীয় স্বর্ণাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের বীজ। রংপুর অঞ্চলে
২ ও ১০ কেজি প্যাকেটের স্বর্ণা বীজ বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৪০ ও ৬৫০ টাকায়। রংপুর সদর উপজেলার বকুল সরকার বলেন, স্বর্ণা বীজে প্রথম দিকে ভালো ফলন পেলেও এখন কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ভেজাল বীজে বাজার ছয়লাব। প্যাকেট দেখে তাই আসল-নকল বোঝার উপায় নেই। এতে কৃষকরা লোকসানে পড়ছেন। এ অবস্থায় বাজার নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। তবে অনেক কৃষকের মতে, বিএডিসির বীজের তুলনায় আসল ভারতীয় স্বর্ণা বীজে ফলন ভালো পাওয়া যায়। তারা বিএডিসির উন্নত জাতের ধানের বীজ বাজারে আনার দাবি জানান।
নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার চরাই খোলা ইউনিয়নের আব্দুর রহিম বসুনিয়া বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে বিএডিসির বিআর-১১ ধান আবাদ করছেন। প্রথম দিকে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতকে) ১৮ মণ ধান পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৩-১৪ মণ। গুটি স্বর্ণা আবাদে পাওয়া যায় ১৫-১৬ মণ। বিএডিসির ভালো মানের ধানবীজ বাজারে না আসায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপায়ে নিম্নমানের বীজ বিক্রি করছেন। এতে কৃষক প্রতারিত হচ্ছেন বলে জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএডিসির বীজ ডিলার বলেন, কৃষকদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে স্বর্ণা ধান। বিএডিসির ধানের বীজের কোনো চাহিদা নেই। কিন্তু বাধ্য হয়ে বীজ নিতে হয়। বীজ বিক্রি না হলে তা থেকে চাল উত্পাদন করা হবে। এতে লোকসানের অংক কমবে।
বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশন রংপুর আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ মোস্তফা আলী হাকীম বলেন, যে বীজে ভালো ফলন পাওয়া যাবে, সে বীজেই আগ্রহী হবেন কৃষক। মানসম্মসত বীজ উত্পাদক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বিষয়টি তাদের কাছে বিচার্য নয়। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে (বারি) উচ্চফলনশীল বীজ উদ্ভাবন করার আহ্বান জানান। তা না হলে বিএডিসি উত্পাদিত বীজের চাহিদা আরো কমবে। পাশাপাশি তিনি অননুমোদিত বীজ বিক্রি বন্ধে সারা দেশে একযোগে অভিযান পরিচালনার দাবি জানান।
রংপুর বিএডিসি আঞ্চলিক বীজ গুদামের উপসহকারী পরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক এ অঞ্চলের আমন মৌসুমের ৭০০ টন বীজ পাঁচ জেলার বিএডিসির তালিকাভুক্ত ৭৭৬ ডিলারের কাছে সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতি ডিলারের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে এক টন। বীজের জাতভেদে ডিলারদের কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে মূল্য দিতে হচ্ছে। তার ভাষ্যে, বিএডিসির এক টন বীজে ফলন পাওয়া যায় চার-পাঁচ টন। অন্য বীজে এর চেয়ে কম ফলন পাওয়া যায়। অননুমোদিত বীজ সরবরাহ বন্ধে বাজার মনিটরিং জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
রংপুর আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির ভারপ্রাপ্ত রিজিওনাল সিডস সার্টিফিকেশন অফিসার আফসার আলী বলেন, জাতীয় স্বার্থে স্বর্ণা বীজ বিক্রিতে বাধা না দিয়ে নীরব থাকতে হচ্ছে। তবে ভেজাল বীজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি কৃষকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম