কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী মসলিন দেশে উৎপাদিত তুলা থেকেই তৈরি হতো। কালের বিবর্তনে মসলিন হারিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বস্ত্র উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল তুলাচাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। দেশে বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ বেল তুলা চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র এক থেকে দেড় লাখ বেল। ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ প্রতিবছর ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দ্বিতীয় শীর্ষ আমদানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল ফসল ধারাকে অপরিবর্তিত রেখে তুলার চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। উত্তরাঞ্চলে পতিত জমি বিশেষ করে স্থায়ী চর, ফলের বাগান, বরেন্দ্র এলাকায় অর্থকরী এ ফসলের আবাদ বাড়ানোর সুযোগ আছে। আবার ছয় মাসের পরিবর্তে স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন উচ্চফলনশীল জাত, সারাবছর চাষ উপযোগী জাত, ভারী বর্ষণে সাময়িক বা আকস্মিক বন্যায় জলমগ্ন সহিষ্ণু জাত, তুলার বলের মাজরা পোকা প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রংপুরে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত ‘উত্তরাঞ্চলে তুলা চাষের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় রংপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ ড. ফরিদ উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক ড. মো. তাসদিকুর রহমান। প্রধান অতিথি নির্বাহী পরিচালক বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও বস্ত্র উৎপাদনের অন্যতন কাঁচামাল তুলা উৎপাদনে অনেক পিছিয়ে। প্রতিবছর আমাদের প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়। চাহিদার বিপরীতে ১০ লাখ বেল এ দেশে উৎপাদন করা গেলেও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যেত।
তুলা চাষ লাভজনক করতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড উন্নত কলাকৌশলসহ হাইব্রিড জাতের প্রচলন ঘটিয়েছে। আগে যেখানে এক বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ তুলা পাওয়া যেত সেখানে আধুনিক জাতে ২০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তবে গড়ে ১২-১৩ মণ ফলন পাওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, তুলা বীজ থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। পাকিস্তানে ভোজ্য তেলের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ তুলার তেল পূরণ করে থাকে। এ ছাড়া তুলার খৈল উন্নতমানের জৈব সার ও প্রাণিখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। এমনকি তুলাগাছ থেকে পারটেক্স বোর্ড তৈরি করা সম্ভব। তুলাচাষে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রংপুর পীরগঞ্জ উপজেলার তুলাচাষি সুলতান মিয়াকে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি ৪০ শতক জমিতে ১৭ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত ২৫ মণ ১০ কেজি তুলা ৫৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে নীট ৩৯ হাজার টাকা লাভ করেন।
কর্মশালার সভাপতি রংপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকারের উৎসারিত কৃষিনীতি কৃষি উন্নয়নে এক যুগান্তকারী মাইলফলকে নিয়ে গেছে। তিনি তুলা চাষ সম্প্রসারণে পতিত ভূমি বিশেষ করে চর এলাকাকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কর্মশালায় রংপুর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও ও বগুড়া জোনের তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল বিষয়ে উপস্থাপনা করেন যথাক্রমে রংপুর জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান, রাজশাহী জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মেজাদ্দীর আল শামীম, ঠাকুরগাঁও জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বী এবং বগুড়া জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল। এ ছাড়া তুলা গবেষণার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রংপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল আমিন।
কৃপ্র/এম ইসলাম