কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদী থেকে অবাধে বালি উত্তোলন করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এতে নদীর পাড় ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে হুমকির মুখে রয়েছে ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। এরই মধ্যে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে গোয়ালন্দ বাজার এলাকায় একটি রেলব্রিজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ বালি উত্তোলনে বাধা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। খবর বণিক বার্তা অনলাইনের।
দেখা গেছে, উপজেলার দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট থেকে উজানচর দরাপেরডাঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মরা পদ্মা নদী বিস্তৃত। সম্প্রতি একটি চক্র নদীর ২০টি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করছে। অবাধে বালি উত্তোলন করা হলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তারা বলছেন, বালি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের লোকজনের যোগসাজশে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জানা গেছে, অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে সম্প্রতি গোয়ালন্দ বাজার এলাকার রেলব্রিজের গাইড ওয়াল ধসে পড়ে। ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান হাবিব সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে দুটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। তারপর থেকে বালি ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন থেমে ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে হাইকোর্ট থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আসার পর আবারো মরা পদ্মার বালি ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
পূর্ব উজানচর ফৈজদ্দিন মাতবর পাড়ার বাসিন্দা আ. রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমাদের খাজনা দেয়া জমি থেকে বালি ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করছে। নিষেধ করলে তারা প্রাণনাশের হুমকি দেয়।’ মাখন রায়ের পাড়ার বাসিন্দা গোপাল চন্দ্র রায়, গফুর মণ্ডল পাড়ার মোসলেম শেখ বলেন, এ এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে মরা পদ্মার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আগে ইরি-বোরো ধান ও তিল ফসল ফলানো হতো। কিন্তু গত দু-তিন বছরে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের ফলে সেসব জায়গা এখন ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত গভীর। অনেক স্থানে নদীর পাড় ভেঙে ভিটেবাড়ি, বাগান, রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
উজানচর ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিখিল রায় বলেন, ‘ড্রেজারের মেশিন পরিচালনাকারী লোকজন কারো কোনো কথা শোনে না। কেউ কেউ অনেক প্রভাবশালী। তাছাড়া ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা সবুজ হোসেনসহ প্রশাসনের অনেকেই অবৈধ বালি উত্তোলনের বিষয়টি দেখেছেন। তারা ব্যবস্থা নিলেই তো এসব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাদের কোনো পদক্ষেপই দৃশ্যমান নয়।’
বালি উত্তোলনকারী ও দুটি ড্রেজার মালিক গোয়ালন্দ উপজেলার শহিদ খান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে বালির ব্যবসা করে আসছি, জমির মালিককে প্রতি হাজার ঘনফুট হিসাব করে টাকা প্রদান করে থাকি। মালিকের সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলে তারপর বালি উত্তোলন শুরু করি।’
অপর ব্যবসায়ী ছলিম ব্যাপারী জানান, ‘কাউকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, ন্যায্যমূল্য দিয়ে আমরা জমির মালিকের কাছ থেকে বালি কিনে ব্যবসা করি।’ সরকারি জমি থেকে বালি উত্তোলন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যক্তি মালিকের জমি থেকে বালি উত্তোলন করি, সরকারি জমি থেকে নয়। তবে ব্যক্তি মালিকের পাসে যদি সরকারি জমি থাকতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, ‘অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে, উপজেলার দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট থেকে উজানচর দরাপেরডাঙ্গী এলাকায় বালি উত্তোলনের বিষয়টি গতকাল সকালেই শুনেছি। ওই এলাকা পরিদর্শন করে অবৈধ বালি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান হাবিব জানান, মরা পদ্মায় ড্রেজার মেশিন বাসিয়ে বালি উত্তোলনের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, ‘মাত্র সাতদিন হলো রাজবাড়ীতে যোগদান করেছি। তাই ওই এলাকা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলছি। যাতে তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম